প্রতীক চৌধুরী
ভোগান্তির আরেক নাম যশোর-খুলনা মহাসড়ক। বছরজুড়ে চলে উন্নয়নের তোড়জোড়। কাজ শেষ হয়েও হয় না শেষ। উন্নয়ন যন্ত্রণায় ভুগছে এই সড়কে চলাচলকারী মানুষ। সংস্কার কাজে অনিয়মের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও ঠিক হচ্ছে না সড়ক। একই সাথে কাজে ধীরগতির কারণে ভোগান্তি চরমে।
সাধারণ মানুষের দাবি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে উন্নয়নের নামে হরিলুট হচ্ছে। আর ভোগান্তি পোহাচ্ছে জনগণ। তবে সওজ কর্তৃপক্ষের দাবি, অনিয়ম দুর্নীতি নয়, যানবাহনের ওভার লোডের কারনেই এই মহাসড়ক বেশি দিন টিকছে না।
জানা যায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কের যশোর শহর থেকে অভয়নগর পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার অংশ পুনর্নিমাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। প্রকল্পে ব্যয় হয় ৩৪৮ কোটি টাকা। সড়কটি তিন বছর টেকসই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক মাস না যেতেই বিভিন্ন স্থানে ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে।
প্রকৌশলের ভাষায় এ সমস্যাকে ‘রাটিং’ বলে। এক বছরের মধ্যে রাটিংয়ের কারণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। গত জুনে সড়কটি সংস্কারে ১৬০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ওই প্রস্তাবের আওতায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার আরসিসি ঢালাই কাজ চলমান রয়েছে। যা সম্পন্ন হওয়ার কথা আগামী জুনে। পর্যায়ক্রমে বাকি কাজ করা হবে।
ট্রাক চালক রেজাউল ইসলাম বলেন, এই সড়কে সারা বছর কাজ হয়। কাজ শেষ হয়েও শেষ হয় না। আর আমাদের বছরজুড়ে ভোগান্তির শেষ নেই।’ বাস চাল মোতালেব হোসেন বলেন পালবাড়ি থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পিচে ঢেউ উঠেছে (ফুলেফেঁপে উঠেছে)। এই অবস্থায় গাড়ি চালাতে খুব সমস্যা হয়। তারপর আবার রাস্তা মেরামতের নামে খুড়ে রাখা হয় মাসের পর মাস। মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
অভয়নগর উপজেলার চেঙ্গুটিয়া এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, বসুন্দিয়া, প্রেমবাগ, চেঙ্গুটিয়া, ভাঙ্গা গেট, রূপদিয়া, মুড়লী, পদ্মবিলা এবং অভয়নগরের নওয়াপাড়া এলাকায় রাস্তা সবচেয়ে বেশি খারাপ। সংস্কার কাজ চলমান থাকায় যানজটে নাকাল হচ্ছে মানুষ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে রাস্তা টেকসই হচ্ছে না। খানাখন্দ ও ফুলেফেঁপে ওঠা সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
মহাসড়কের সংস্কার কাজে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি দাবি করেন যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, যশোর-খুলনা মহাসড়কের যানবাহনের ওভার লোড বেশি। এজন্য সড়কটি বারবার সংস্কার করা হলেও টিকছে না। বুয়েট, সড়ক ও জনপদ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ১৬ কিলোমিটার রাস্তা আরসিসি ঢালাই করা হবে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটারের কাজ চলমান রয়েছে। এই রাস্তাগুলো ঢালাই করা শেষ হলে সড়কে যাতায়াতে আর সমস্যা হবে না।