চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা
টানা পাঁচ দিন ধরে মাঝারি তাপপ্রবাহের পর শনিবার চুয়াডাঙ্গায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বেলা তিনটায় জেলায় সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। চলতি মৌসুমের মধ্যে যা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ১ ও ৩ এপ্রিল জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঝারি থেকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বইতে থাকায় রোজার মধ্যে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে।
প্রচন্ড গরম অনুভূত হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। দাবদাহ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ ছাতা মাথায় বা গাড়িতে চলাচল করছেন। কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের অনেককে ক্লান্ত দেহে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।
তাপমাত্রার হিসাবে ১ থেকে ৫ এপ্রিল টানা পাঁচ দিন চুয়াডাঙ্গায় মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। আজ একলাফে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়। বইতে থাকে মৌসুমের প্রথম তীব্র তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদরা জানান, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রাকে খুব প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বলা হয়।
পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ১ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় প্রথম মাঝারি তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ওই দিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে ২ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ২, ৩ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫, ৪ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ২, ৫ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। তাপমাত্রার হিসাবে ১ থেকে ৫ এপ্রিল টানা পাঁচ দিন মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল।
আজ একলাফে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়। বইতে থাকে মৌসুমের প্রথম প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ।
শনিবার সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামীকাল রোববার সারা দেশে দিন ও রাতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে গেলেও পরবর্তী পাঁচ দিন তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
প্রচণ্ড দাবদাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। শহরের ঈদগাহ এলাকায় ঠাণ্ডু মিয়ার নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে কাজ করছিলেন ছয় শ্রমিক। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বোতল থেকে পানি নিয়ে চোখে-মুখে ছিটাচ্ছিলেন। গামছা দিয়ে ঘাম মুছছিলেন। তাদেরই একজন সিঅ্যান্ডবি পাড়ার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘১১ বছর ধইরে রাজমিস্ত্রির কাজ কচ্চি। আইজগের মতো গরম কুনুদিন লাগিনি।’
দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব সামসুদ্দিন আলী ফেরি করে খই ও কলা বিক্রি করেন। বিকেলে শহরের কেদারগঞ্জ এলাকায় তার সঙ্গে দেখা হয়। গরমে হাঁসফাঁস করা সামসুদ্দিন বলেন, সন্তানেরা আলাদা থাকেন। স্ত্রী আশুরা বেগমকে নিয়ে তাঁর সংসার। তিনি বলেন, ‘কদিন ধরে য্যারাম গরম পড়চে, তাতে মনডা বোলে না বাড়িত্তি বেইর হই। গরমে বের না হলি খাইত দেবে কিডা? পেটে খিদে থাকলি কি আর বাড়িতি বইস থাকা যায়?’ প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আতাউর রহমান মুন্সি বলেন, তাপপ্রবাহ চলাকালে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হওয়া ভালো। এ সময় প্রত্যেককে পানিসহ বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। চা-কফি এড়িয়ে ফলমূল খেতে হবে। রোজাদারদের ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি।