বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দীর্ঘ ৪ বছর বন্ধ থাকার পর আবারো যশোর শহরের বড় বাজারে অবৈধ ভেজাল মদ ও ¯িপরিট বিক্রি হচ্ছে। অবৈধভাবে ভেজাল মদ ও স্পিরিট বিক্রির ফলে প্রাণহানির আশংকা দেখা দিয়েছে। রমজান মাসে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় অর্থলোভী কর্মকর্তা ও সদস্যদের সাথে যোগসাজসে শহরের বড় বাজারের বাবু বাজার পতিতালয় ও তার আশপাশের এলাকা এবং মাড়ুয়ারী মন্দির সংলগ্ন পতিতালয়ের দক্ষিণ পাশে ও সামনে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ ভেজাল মদ ও স্পিরিট। বড় বাজারের দু’টি স্থানে ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ও সদর পুলিশ ফাঁড়ির কতিপয় অর্থলোভী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে অবৈধ ভাবে মদ ও স্পিরিট বেচাকেনা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাবু বাজার পতিতালয়ের আশপাশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগে জানান, বাবু বাজার পতিতালয় ও তার সামনে তাড়িখানার গলিসহ আশপাশ এলাকায় ইছালী ইউনিয়নের সাবেক কাউন্সিলর জাকিরের নেতৃত্বে শহরের বেজপাড়ার নিবাসী মন্টু সাহা, বিরামপুরের রাসেল, আনারুল, চায়ের দোকানের আড়ালে বিরামপুরের আব্দুর রশিদ, ভোলা জেলার বাসিন্দা আবাসিক হোটেল স্বপ্নপুরি হোটেলের বর্ডার ছোট মহাসিন ও মাড়ুয়াড়ী মন্দির সংলগ্ন পতিতালয়ের পাশে ও সামনে বাবু, সাজু, রতন, কৃষ্ণ, কালো মিন্টুসহ একটি অবৈধ ভেজাল মদ বিক্রি সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে।
এরা খুব ভোরে শহর থেকে মদ সংগ্রহ করে লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে বিক্রি করছে। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মদ বিক্রি এই সিন্ডিকেট মদের মধ্যে বিভিন্ন বিষাক্ত স্পিরিটসহ নেশায় আসক্ত করার উপাদান মিশিয়ে অধিক লাভের আশায় সেবনকারীদের কাছে অবৈধ ভাবে বিক্রি করছে। অথচ কোতয়ালি থানার দূরত্ব মাড়োয়ারি থেকে ৫০ গজ। বছর চারেক আগে ২০২০ সালের ২৫ এপ্রিল যশোরে ভেজাল মদ ও স্প্রিট পানে ১৭ জন মারা যায়্ এ ঘটনায় কোতয়ালি থানায় ৫ টি মামলা হয়। এরপর বেশ কয়েক বছর মাড়োয়ারি পতিতালয়ের সামনে মদ বিক্রি বন্ধ ছিলো। সম্প্রতি রোজার ভিতর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা ও পুলিশের কতিপয় সদস্যদের সাথে যোগসাজসে আবারো ভেজাল মদ ও স্পিরিট বিক্রি হচ্ছে।
অভিযোগে আরো জানানো হয়েছে, শহরের হাটখোলা রোডস্থ মাড়োয়ারী মন্দির সংলগ্ন পতিতালয়ের সামনে ও দক্ষিন পাশে এবং বাবু বাজার পতিতালয় এলাকায় মদ বেচাকেনার সাথে জড়িত কমপক্ষে ৩০ জনের অধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মাদক আইনে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা চলমান থাকলেও তারা অবৈধ ভেজাল মদ বিক্রি থেকে একটু পিছুপা হয়নি। তবে এক সময় মাড়ুয়ারী মন্দির সংলগ্ন এলাকা থেকে মদ বিক্রির অভিযোগে আবু হাসান নামে এক ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশ ওই সময় গ্রেফতার করে। আবু হাসান দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর আটক হয়ে স্বেচ্ছায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
ওই সব মাদক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সেই সময় আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। যে মামলাগুলি বিচারাধীন। অভিযোগে আরো জানান যায়, ওই সময় মামলার আসামিদের মধ্যে বর্তমানে কয়েকজন আবারো বিষাক্ত অবৈধ মদ বেচাকেনা শুরু করেছে। মদ বেচাকেনার সাথে সম্পৃক্ত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, যশোর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় ক সার্কেলের উপ-পরিদর্শক এস এম শাহীন পারভেজসহ দু’জন ও সদর পুলিশ ফাঁড়ির এক এএসআই এবং এক এটিএসআইসহ বেশ কয়েক জনের সাথে সাপ্তাহিক ও মাসিক চুক্তি থাকায় অবৈধ মদ বিক্রেতারা গ্রেফতার হয় না।
সূত্রগুলোর দাবি, সদর ফাঁড়ীর দুই কর্মকর্তা মদের দোকানের সামনে দিয়ে টহল দিলেও না দেখার ভান করে। এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর খুলনা অতিরিক্ত পরিচালকের দৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।