বাংলার ভোর প্রতিবেদক
তৃতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। এ ধাপে দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে ১১২টি উপজেলায় ভোট হবে। এর মধ্যে ৯টি জেলার ২১টি উপজেলায় ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। বাকি ৯১টি উপজেলার ভোট হবে কাগজের ব্যালটে। এ নিয়ে তিন ধাপে ৪২২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলো।
ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে খুলনা বিভাগের ১১ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে। সেগুলো হলো, খুলনা বিভাগের যশোর জেলার সদর (ইভিএম), অভয়নগর (ইভিএম) ও বাঘারপাড়া (ইভিএম); বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও মোংলা; খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া; সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া ও সদর। এসব উপজেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে বা অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ২ মে পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৫ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১২ মে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৩ মে। প্রচার পর্ব শেষে ২৯ মে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাধারণ নির্বাচন হবে এসব উপজেলায়। ১১২টির মধ্যে ২১টি উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে; বাকিগুলোয় ব্যালটে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে কমিশন সভায় তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হয়। পরে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বিস্তারিত দিনক্ষণ জানান। দেশে এখন ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। এবার চার ধাপে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫টিতে ভোট হবে, পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকিগুলোয় ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৮ মে ১৫০ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে ১৬১ উপজেলায় ভোট হবে। আর চতুর্থ ধাপের ভোট হওয়ার কথা ৫ জুন। আইনে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন করতে হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা বিধি ও আচরণ বিধি সংশোধন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করেছে। এতদিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের যে তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হত, এখন তা দিতে হচ্ছে না। সেই সঙ্গে সাদাকালোর সঙ্গে রঙিন পোস্টারও ছাপাতে পারবেন প্রার্থীরা। ভোটের প্রচারের সময়ও পাচ্ছেন বেশি। তবে জামানতের পরিমাণ বেড়েছে এবার। চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে একদিনেই ভোট হয়েছিল। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন ছয়টি ধাপে ও ২০১৯ সালে পাঁচ ধাপে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের ভোট হয়। প্রথম চারটি উপজেলা নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হলেও আইন সংশোধন হওয়ায় ২০১৭ সালের মার্চে মেয়াদোত্তীর্ণ তিনটি উপজেলায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়েছিল। পরে ২০১৯ সালে দলীয় প্রতীকে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন হয়।
দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও বিএনপি পরে নির্দলীয় উপজেলা ভোটে অংশ নিয়েছিল। গেল ১০ বছর ধরে উপজেলা ভোটে দলীয় প্রার্থী দেয়নি দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর এবার স্থানীয় নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়পত্র জমা দেয়ার বিধান থাকায় মনোনয়নপত্রের প্রিন্ট কপি দেয়া লাগবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলায় ২১ এপ্রিল এবং তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২ মে পর্যন্ত মনোনয়ন জমার সময় রয়েছে। বুধবার নির্বাচন কমিশন সব রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের এক নির্দেশনায় বলেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান করা হয়েছে। “অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর কোনো কোনো জেলা/উপজেলায় বিধি বহির্ভূতভাবে মনোনয়নপত্রের প্রিন্ট কপি প্রার্থীর কাছে হতে চাওয়া হচ্ছে। এভাবে বিধি বহির্ভূত প্রিন্ট কপি প্রদানে বাধ্য না করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
তবে বিধি অনুযায়ী বাছাইয়ের সময় হলফনামার মূল কপি অথবা কোনো তথ্য বা কাগজপত্র অপূর্ণ থাকলে তা দিতে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে অবহিত করা যেতে পারে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় প্রার্থী বা প্রস্তাবকারী, সমর্থনকারী অথবা প্রার্থী কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থিতির সুযোগ থাকলেও তা বাধ্যতামূলক নয়।