রাজগঞ্জ প্রতিনিধি
‘তোমার হাতপাখার বাতাসে…. তীব্র এই গরমে আমজনতার মুখে গানের সুর বাজার সাথে সাথে খোজ পড়ে তালপাতার তৈরি হাতপাখার। এই হাতপাখা তৈরি করে ভাগ্য বদল করেছেন মনিরামপুরের রাজগঞ্জ অঞ্চলের বাজন্দরপাড়া গ্রামের বহু পরিবার।
বৈশাখের এই প্রণ্ড খরতাপে হাতপাখার জুড়ি মেলা ভার। এ সময় তাই হাতপাখারও কদরও বেড়ে যায় অনেক। বাজন্দরপাড়ার বাসিন্দাদের এখন কাটচে মহাব্যস্ত সময়। হাতপাখা তৈরির কারিগর আলিফ ও তার স্ত্রীর মত গ্রামের অনেক নারী ও পুরুষ এখন প্রচন্ড গরমের জন্য হাতপাখা তৈরী করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
মনিরামপুর উপজেলা চালুয়াহাটি ইউনিয়নের ধোপাডাংগা গ্রামের বাজন্দার পাড়ায় ২০ থেকে ২৫ পরিবারের সদস্য জীবন ও জীবিকা তাগিদে তাল গাছ থেকে পাতা কেটে শুকাতে ও পাখা তৈরি করতে নির্ঘুম সময় পার করছেন। পাখা বিক্রি করেই তারা স্বপ্ন বুনছেন ভাগ্য বদলের। কারিগর আলিফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ আমাদের পূর্বপুরষরা করে আসছেন। তালপাতা দিয়ে বাহারি রঙের হাতপাখা তৈরি করে বিক্রি করেই চলে আমাদের সংসার। বসন্তের শুরু থেকে বর্ষা পর্যন্ত তালপাতার তৈরি হাত পাখার চাহিদা থাকে। বিদ্যুতের লোডশেডিং ও প্রচণ্ড তাপদাহে শহর কিংবা গ্রামের পাখার চাহিদা থাকে অনেক। বিভিন্ন হাটবাজারে খুচরা ও পাইকারদের কাছে বিক্রি করাহয় পাখা। একটি পাখা তৈরির কাঁচামাল, শ্রমিক ও বাজারজাত করতে সর্বমোট ১০ থেকে ১৫ টাকা খরচ হয়। পাখার ব্যপক চাহিদার কারণে প্রতি পিস পাখা পাইকারী ২০ থেকে ২৫টাকায় বিক্রি হয়। পাখা তৈরির শিল্পী নাহার বেগম বলেন, দীর্ঘ তিনযুগ ধরে তালের হাত পাখা তৈরি করে আসছি। একই সুরে কথা বলেন কারিগর আরশাদ আলী ও আকবর। তারা জানান এক সময় সংসার চালানো ছিল কষ্ট সাধ্য। তারপর এ ব্যবসা করেই ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে এলাকার অধিকাংশ হাতপাখা শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বাড়িপাকা করেছে। মাঠে ঘাটে জমি রেখেছে, সন্তানদের মানুষ করেছে। পাখা তৈরীর শিল্পী ও কারিগার মান্দার বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে তাদের ব্যবসার মোড় ঘুরেছে,প্রতিটি বাড়িতে খড়ের ঘরের স্থানে টিনের চারচালা অথবা পাকাঘর উঠেছে। এসব কারিগররা আরো বলেন, অধিক পুজি থাকলে শীতের সময় পাখা তৈরি করে মজুদ করতে পারলে ব্যবসা আরো ভালো হতো। অন্যদিকে এ ব্যবসার শ্রমিকরা ও কাজ পেতো। তাই সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্পটি এ অঞ্চলের একটি অন্যতম অর্থকরী পণ্য হতে পারে।
##