♦ অবাধে মোবাইল ব্যবহারে সংঘর্ষ : দু’ কারারক্ষীসহ আহত ৭
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ভাইপো রাকিব ও সম্রাট গ্রুপের দ্বন্দ্বে শহরবাসী আতংকে থাকে সবসময়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকাবাসীর জানমাল নিয়ে ভোগের নিরাপত্তাহীনতায়। এ দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে খুন-জখমের ঘটনা ঘটেনা এমন দিন পার করাই শহরবাসীর জন্য বড় সাফল্যের। সেই দুই সন্ত্রাসী বর্তমানে দুটি হত্যা মামলায় আটক হয়ে রয়েছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ। কিন্তু সেখানেও থেমে নেই তাদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। তারই জের ধরে গত শুক্রবার সকালে ভাইপো রাকিব ও সম্রাট গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে দু’জন কারারক্ষীসহ অন্তত ৭ জন হাজতী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বাইরে অপরাধের পাহাড় গড়া কুখ্যাত আপরাধীরা কারা অভ্যন্তরে গড়ে তুলছেন নিজস্ব অপরাধী চক্র। তারা কারাগারে ফিল্মি স্টাইলে সংঘবদ্ধভাবে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন। অধিকাংশ অপরাধী অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে গিয়েও অপরাধ করা থেকে বিরত থাকছেন না। এতে করে ওই সব হাজতিদের স্বজনরা ভুগছেন হতাশায়।
গত শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মোবাইল ফোনে কথা বলা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হাজতিদের দু’গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষে চার-পাঁচজন হাজতি আহত হন। তাদের সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে দু’জন কাররক্ষীও জখম হন বলে খবর পাওয়া গেছে। ঘটনার একপর্যায়ে হুইসেল বাজিয়ে কারারক্ষীরা ভেতরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন খুলনা কারা উপ-মহাপরিদর্শক অসীম কান্ত পাল। জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে। তবে, সংঘর্ষের সূত্রপাতের বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ পূর্ব কোন্দলের কথা জানালেও মূলত মোবাইল ফোনে কথা বলা নিয়ে ঘটনা ঘটেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায়। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসংখ্য দর্শনার্থী দেখা করার ঘরের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন। হঠাৎ হুইসেল বেজে ওঠে। মুহূর্তেই মানুষ দিকবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। দর্শনার্থীদের দ্রুত বাইরে বের করে দেয়া হয়। অন্যদিকে, সকল কারারক্ষী যে যার অবস্থায় ছিল তাড়াহুড়ো করে লাঠি নিয়ে কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। এতে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। কেউ কেউ বলতে থাকে আসামি পালিয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হাজতির স্বজন জানিয়েছেন, কারাগারের ভিতরে সংঘবদ্ধভাবে সন্ত্রাসীরা মারামারি গন্ডগোল করছে। কারাগারে বন্দি থেকেও অপরাধীরা নির্বিঘ্নে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। কারাগারে হাজরিত মোবাইল ফোন ব্যবহার কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা ছাড়া কিছুই না। কথিত আছে টাকার বিনিময়ে হাজতিরা দেদার ব্যবহার করছে মোবাইল ফোন।
কেন্দ্রীয় কারাগারে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কারা অভ্যন্তরের নিউ জেল এলাকার সামনে সন্ত্রাসী ভাইপো রাকিব ও আরেক সন্ত্রাসী সম্রাটের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এ সময় দু’গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। শেষমেষ তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে দু’কারারক্ষী জখম হয়েছেন। তাদেরকে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, আহত হাজতিদেরও সেখানে চিকৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, তাৎক্ষণিক কারা কর্তৃপক্ষ জড়িত সাত-আটজনকে চিহ্নিত করেছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে পৃথক স্থানে রাখার পাশাপাশি তাদেরকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দু’কারারক্ষী ও ছয়-সাতজন হাজতিকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা আশঙ্কামুক্ত ও সুস্থ রয়েছেন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার বলেন, ঘটনাটি সামান্য। তবে, আকস্মিকভাবে তাদের একজন কারারক্ষী অ্যালার্ট হুইসেল বাজিয়ে ফেলেন। এতে করে বিষয়টি বড় আকারে রূপ নেয়। তিনি বলেন, মূলত যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে শহরের দাগী কয়েকজন সন্ত্রাসী রয়েছে। তাদের মধ্যে ভাইপো রাকিব অন্যতম। এদের দু’টি গ্রুপের সদস্যদের বাইরেই কোন্দল ছিল। যার রেশ কারাগারেও রয়েছে। এবং সেই ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা করেছে উভয় গ্রুপই। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, কারারক্ষীদের উপর হামলা চালানো হয়নি।
উল্লেখ্য, যশোর কোতয়ালী মডেল থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ভাইপো রাকিব ও সম্রাটের নামে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজী, মাদক ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন আইনে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে।