বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছায় নূরী বেগম (২৮) নামে এক গৃহবধূ হাতের তালু ও চিরকুট লিখে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। দিনমজুর শহিদুল ইসলাম চৌগাছা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের হালদারপাড়ার বাসিন্দা হলেও স্ত্রী নিয়ে টেঙ্গুরপুর গ্রামে একটি টিনশেডের বাড়ি করে বসবাস করতেন।
নারীটির হাতের তালু ও কাগজে লাল কালিতে লেখা ছিলো ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি না সন্তান না হবার কারণে আমি গলাই দরি দিলাম, একই কাগজের অন্য প্যারায় লাল কালিতে লেখা, ‘‘দুনিয়া বড় কঠিন আমি সব কিছু ছেরে চলে গেলাম। কাগজটির অপরপিঠে কালো কালি দিয়ে লেখা, ‘‘এই তোমার এই নাক বুছিরে কেন ভালোবাসো কেন বিয়ে করতে চাও।’’ শনিবার বেলা ১০টার দিকে গ্রামে স্বামীর টিনশেড ঘরের আড়া থেকে নূরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে প্রতিবেশিরা।
নূরীর স্বামী শহিদুল ইসলাম জানান, প্রায় ১২ বছর আগে তিনি মহেশপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের আসগর আলীর মেয়ে নূরীকে বিয়ে করেন। এতদিনেও তাদের কোন সন্তান জন্ম না নিলেও এনিয়ে তাদের কোন আক্ষেপ ছিলো না। শহিদুল আরও জানান, কয়েকমাস আগে তার পোষা একটি ছাগলের অসুখ হয়। সেটি দেখার জন্য পাশর্^বর্তী হাজরাখানা গ্রামের আসাদ নামে এক গ্রাম্য পশু চিকিৎসক তার বাড়িতে আসেন। এরপর থেকে আসাদের সাথে তার স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে মনোমালিন্য হলে স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকে সপ্তাহ খানেক আগে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে শহিদুলকে ডিভোর্স লেটার পাঠায় নূরী। তবে শহিদুল ডিভোর্স লেটারটি গ্রহণ করেন নি। পরে শহিদুল নূরীর বাবার বাড়িতে গেলে নূরী শুক্রবার (৩১মে) সন্ধ্যায় শহিদুলের সাথে স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন। শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে শহিদুল চৌগাছা বাজারে নিজের কর্মস্থলে চলে যান। সেখানে প্রতিবেশিদের কাছ থেকে মোবাইলে সংবাদ পান স্ত্রী নূরী ঘরের আঁড়ার সাথে ঝুলছে। বাড়ি ফিরে দেখেন প্রতিবেশিরা নূরীর লাশ নামিয়ে ঘরের বারান্দায় রেখেছে।
স্বামী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে স্ত্রী একাধিকবার বলেছে ‘আমি আসাদ ডাক্তারকে ভালোবাসি, আমি তাকে বিয়ে করবো। ডাক্তার আমাকে চৌগাছার দোতলা (চৌগাছা শহরের নিরিবিলি পাড়ায় আসাদ একটি দ্বিতল বাড়ি করেছেন) বাড়িতে রাখবে।’ সে আমাকে ডিভোর্স লেটারও পাঠিয়েছে। কিন্ত আমি নিইনি। আমিতো ওকে ১২ বছর ধরে ভালোবাসি।’ বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন শহিদুল।
এ বিষয়ে পশু চিকিৎসক আসাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার পরিবারের একাধিক সদস্য জানান, তারা আসাদের সাথে ওই নারীর পরকীয়া ও বিয়ের ঘটনা লোকমুখে শুনেছেন।
চৌগাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান আত্মহত্যার ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হবে। তদন্তের আগে এর বেশি বলা যাচ্ছে না।