সাতক্ষীরা সংবাদদাতা
সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় সরকারি বোরো ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কেজি প্রতি ২ টাকা উৎকোচ নিয়ে নিম্নমানের ধান ক্রয় করছেন ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা। আর এসব হয়রানির শিকার হয়ে গুদামে ধান বিক্রি করতে পারছেন না উপজেলার প্রান্তিক বোরো চাষীরা।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা এসএম আমিনুর রহমান বুলবুল চিহ্নিত ৪/৫জন ফড়িয়ার কাছ থেকে কেজি প্রতি ২ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে নিম্নমানের ধান কিনে গুদাম ভরছেন। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটি, তুজুলপুর ও ঝাউডাঙ্গা বাজারের বিভিন্ন পাইকারী ধানের আড়ত থেকে প্রতিদিন রাতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন ধান ট্রলিযোগে সাতক্ষীরা খাদ্য গুদাম সংলগ্ন এলাকায় রাখা হচ্ছে। সকাল হলেই সেসব ধান সিন্ডিকেটের সদস্যরা গুদামে বিক্রি করছে।
উপজেলা খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৬১ মেট্রিক টন ধান সরকারি দামে (কেজি প্রতি ৩২ টাকা) কেনা হবে। গত ৭ মে, ২০২৪ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধনের পর মঙ্গলবার (৪ জুন) পর্যন্ত ২ হাজার ১৮২ টন ধান কেনা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কৃষকরা জানান, গুদামে কৃষকের তালিকায় রয়েছে রাজনৈতিক নেতা-কর্মি, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। আবার অনেক কৃষক জানেই না তাদের নাম তালিকায় রয়েছে! এর ফলে প্রান্তিক কৃষকেরা বাধ্য হয়ে ফাড়িয়াদের কাছে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
সরেজমিনে খাদ্য গুদাম ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কুশখালী এলাকার গুদাম সিন্ডিকেট মোহর আলী, মুনসুর, মাহামুদপুর এলাকার নুর হোসেন ও আলীপুর লাকার চিহ্নিত চিহ্নিত গুদাম সিন্ডিকেট সদস্যরা ১২/১৫ টন ধান প্রকাশ্যে গুদামে বিক্রি করছে। এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুদামের এক লেবার বলেন, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাতে নিয়ে আসা ধান সকালে স্যারের সামনে গুদামে প্রবেশ করা হয়। এছাড়া প্রথমদিকে কিছু প্রকৃত কৃষক গুদামে ধান নিয়ে আসলেও উৎকোচসহ বিভিন্ন হয়রানীর কারণে এখন আর কেউ ধান বিক্রি করতে আসে না। তিনি আরও জানান, চিহ্নিত ফড়িয়া সিন্ডিকেট সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তার পরামর্শে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। এর ফলে তাদের ধান বিক্রির টাকা দিতে সমস্যা হয়না। আর এর বিনিময়ে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেজি প্রতি ২টাকা ও সরকারি বস্তা প্রতি ১টাকা হারে উৎকোচ গ্রহণ করছেন বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম আমিনুর রহমান দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে ফড়িয়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকায় নাম থাকা কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। উৎকোচ গ্রহণ ও সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।