হাসান আদিত্য
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শহীদ আসাদ হল দখলে নিয়েছে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। দেড় বছর পর রোববার বেলা ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরা হলটি দখলে নেয়।
আট বছর আগে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হটিয়ে শাহীন অনুসারীরা হলটি দখলে নিয়েছিলেন। এরপর গত বছর জানুয়ারিতে সংসদ কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারীদের দখলে চলে যায় হলটি। হল দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে দুটি পক্ষের বহিরাগত ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মহড়া দিতেও দেখা গেছে। যদিও হলটি দখলের সময়ে কলেজে সরকারি ছুটি রয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের তিনতলা ভবনের ১২০ সিটের শহীদ আসাদ হলটি দীর্ঘদিন ছাত্রদলের দখলে ছিল। ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরা হলটি দখল করে। এরপর ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি শাহীন অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হটিয়ে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেন স্থানীয় সংসদ কাজী নাবিল আহমেদ। হলটি নিয়ন্ত্রণ করতেন এমপি নাবিলের অনুসারী পৌরসভার ৪ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগনেতা শেখ জাহিদ হোসেন মিলন। সর্বশেষ রোববার (২৩ জুন) বেলা ১২ টার দিকে শাহীন চাকলাদারের অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াসের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মী মহড়া দিয়ে হলটি দখলে নেয়। এসময় এমপি নাবিল অনুসারীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের দ্রুত জিনিসপত্র নিয়ে নেমে যাওয়ার নির্দেশনা দেন।
এর পর দুপুরে আসাদ হলে অবস্থানরত এমএম কলেজে নাবিল অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হল ত্যাগে বাধ্য হয়। এদিন দুপুরে হলে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের মালামাল নিয়ে ভ্যানে চলে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ বর্ষেও এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি নির্দেশ দিয়েছে হল ছেড়ে দিতে। তাই চলে যাচ্ছি।’
কাজী নাবিল অনুসারীদের পক্ষে আসাদ হল নিয়ন্ত্রণ করতেন কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগনেতা এনামুল হোসেন ইমন। তিনি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে একদল অছাত্র বহিরাগতরা আসাদ হলে আসে। তারা এসে বিভিন্ন কক্ষের তালা ভাঙ্গে। হলে এসে তারা উপস্থিত ছাত্রদের বলেন এই হল এখন থেকে শাহীন ভাইয়ের ছেলেরা নিয়ন্ত্রণ করবে। তোরা যারা আছিস সবাই চলে যা। আধাঘন্টা সময় দিলাম যার যা জিনিস আছে সব গুছিয়ে হল ত্যাগ কর।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাচনে শাহীন চাকলাদারের ভাই ফন্টু চাকলাদার বিজয়ী হয়েছেন। তার পরে তাদের অনুসারীরা বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছিলো হল নিয়ন্ত্রণে নিবে। ‘ঈদের ছুটিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী গ্রামে। চতুর্থ বর্ষে যাদের পরীক্ষা ছিলো তারা এসেছিলো। হল দখল শব্দটা আসাটাই দুঃখজনক। তারাও রাজনীতি করে, আমরাও রাজনীতি করি।
অছাত্র বহিরাগত স্থানীয়দের নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার কোন দরকার ছিলো না। বহিরাগতরা হলে বা ক্যাম্পাসে এসে কেউ যদি ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বিরুপ করে তাহলে আমরা তাদের ছেড়ে দিবো না।’
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার বলেন, শহিদ আসাদ হলের অধিকাংশ কক্ষ ফাঁকা পড়ে আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকেই হলে থাকতে চান। তারা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমাকে নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে যান।
আমরা তাকে অনুরোধ করি সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য। এরপর হোস্টেল সুপার সহকারী অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে আমরা হলে গিয়ে খালি কক্ষগুলো চিহ্নিত করি।
সেখানে বিধি মোতাবেক সাধারণ শিক্ষার্থীকের আবাসনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছি। কাউকে হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়নি। হল দখলের মত কোন ঘটনাও ঘটেনি। কেউ কেউ নিজ নিজ মালামাল নিয়ে চলে গেছেন। কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। হল দখল নিয়ে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’