বাংলার ভোর ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন শিক্ষা ও গবেষণার কাজে আরও বরাদ্দ বাড়াই। ২০১০ থেকে বিনা পয়সায় বই দেওয়া শুরু করি। অনেকে ভেবেছে যে এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। ছেলেমেয়েরা যাতে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, দেশ-বিদেশের কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখে বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ সোমবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তিজ্ঞান ছাড়া কোনও দেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন কেউ কম্পিউটার ব্যবহার করতো না। টেলিফোন ছিল অ্যানালগ। আমরা টেলিফোন সিস্টেমকে ডিজিটালাইজ করি, কম্পিউটার শিক্ষার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় দুই-তিনটা কম্পিউটার দিয়ে। ছেলেমেয়েরা যাতে উন্নত শিক্ষা নিতে পারে, তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। তা ছাড়া আইন পাস করে ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি আমরা করে গিয়েছিলাম। কিন্তু ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি আর বিএনপি সেটা বাতিল করে দেয়। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন শিক্ষা ও গবেষণার কাজে আরও বরাদ্দ বাড়াই। ২০১০ থেকে বিনা পয়সায় বই দেওয়া শুরু করি। অনেকে ভেবেছে যে এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। ২০১০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৪৬৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করেছি।’
’৭৫-পরবর্তী যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা গবেষণায় কোনও বরাদ্দ দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গবেষণায় আমাদের কোনও বরাদ্দ ছিল না। আমাদের প্রথম বাজেট ছিল অল্প। সেখান থেকেও গবেষণার জন্য টাকা দিই। পরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়েছিলাম। সেটা ছিল কম্পিউটার শিক্ষা ও গবেষণায়। আমাদের শুধু একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আমি আরও কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিই। সেই সঙ্গে ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নভোথিয়েটার প্রতিষ্ঠা, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়ু টেকনোলজি ইনস্টিটিউট সব আওয়ামী লীগ সরকার আমলে শুরু করেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৩০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কৃষি, ভেটেরিনারি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি আরবি, অ্যাভিয়েশন, অ্যারোস্পেস, বেসরকারি খাতে ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছেলেমেয়েরা যাতে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, দেশ-বিদেশের কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখে বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা ও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা কম ছিল, সেটা আমরা বাড়িয়েছি।
সরকারি সামাজিক খাতগুলোর শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই। বাজেটে শিক্ষা খাতেই সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়।’
আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মবিশ্বাস মানুষকে শক্তি দেয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ সমালোচনা করলেই ভীত হয়ে যেতে হবে, আমি এটা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের বলবো, সবসময় এটাই চিন্তা করতে হবে। কে কী বললো, তার জন্য চোখের পানি ফেলে মুখ লুকাতে হবে তা না। নিজের বিশ্বাস থেকে শিখতে হবে। তাহলে এ দেশকে তোমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করার জন্য অনেক চক্রান্ত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আরও এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। কিছু লোকের সবসময় কোনও কিছু ভালো লাগে না। আর ভালো হতেও দিতে চায় না। তাদের পাত্তা না দিলেও চলবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নেতাদের মুখে দেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বড্ড বেমানান। তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানি চুক্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ভুলে গিয়েছিলেন। অথচ শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেই ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পন্ন করেন। প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে এই চুক্তি নবায়নের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
সোমবার আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি। এতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘নিয়মমাফিক অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর চমৎকার, ফলপ্রসূ ও আন্তরিকতাপূর্ণ ছিল। এই সফরে দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতি ও অর্জনগুলো স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে এবং ১৩টি সুনির্দিষ্ট ঘোষণা এসেছে। ’
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সবসময় দেশ ও জনগণের মর্যাদা ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার পরিচালনা করেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র যেকোনও নীতিতে তার প্রধান বিবেচ্য দেশের জনগণের স্বার্থ ও নিরাপত্তা। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরও এর ব্যতিক্রম নয়।’
বিএনপি ও মির্জা ফখরুলরা কখনও বর্তমান সরকারের সফলতা দেখে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে কৌশলগতভাবে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। শেখ হাসিনা এই সফরে তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল। শেখ হাসিনা এই আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এ কারণে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য ভারতের ই-মেডিক্যাল ভিসা চালুর সিদ্ধান্তে দুই দেশ ঐকমত্য হয়েছে। এতে বাংলাদেশের জনগণের ভোগান্তি কমবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নতুন নতুন রুটে বাস-ট্রেন চালু এবং নতুন উপ-হাইকমিশন খোলার ঘোষণা দুই দেশের মানুষে মানুষে সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। তিস্তার পানি বণ্টন ছিল এই সফরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে মতদ্বৈধতা রয়েছে। এই সমস্যা থাকার পরও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সুস্পষ্টভাবে তিস্তার পানি সংরক্ষণ প্রকল্প বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে ভারত দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে দুই দেশের সীমানা জটিলতা নিরসনে সীমান্ত ও ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিসরে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অধিকার নিশ্চিত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির সময় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা দিতে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছিল। ভারতীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কে অনাস্থা দেখা দিয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশব্যাকের মতো ঘটনা ঘটেছিল। বিএনপি সেই দল, যারা ভারতের নির্বাচনে বিজেপির জয়লাভের পর ভারতীয় দূতাবাসের দরজা খোলার আগেই অভিনন্দন জানাতে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে হাজির হয়েছিল।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিএনপি আজ বাংলাদেশে ভারতবর্জন ও ভারতবিদ্বেষী রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। এটা তাদের চিরাচরিত দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর তার কন্যা শেখ হাসিনাই একমাত্র সরকারপ্রধান, যিনি যেকোনও দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক দরকষাকষি করে বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদাপূর্ণ স্বার্থ সুরক্ষিত করেছেন।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের ভারতসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বিরাজমান অমীমাংসিত দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।