খাজুরা সংবাদদাতা
অবশেষে বাঘারপাড়া উপজেলার ছোটখুদড়া আব্দুল হাই আলিম মাদরাসা পরিচালনা কমিটি অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৭ জুন মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্টার প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ কমিটি বাতিল করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, একটি অভিযোগের তদন্ত শেষে মাদরাসার চলমান কমিটির বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের জবাবের আলোকে অনুমোদিত কমিটি ভেঙে দেয়া হলো। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বিধি মোতাবেক একটি অ্যাডহক কমিটি করতে হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত দু’বছর ধরে নুর মোহাম্মদ নামের একটি চক্র মাদরাসাটি লুটেপুটে খাচ্ছে। এ চক্রের নিয়োগ বাণিজ্য, সাধারণ তহবিল ও শিক্ষকদের টিউশন ফি’র টাকা আত্মসাত, বেতন বন্ধ রাখা, উচ্চতর বেতন স্কেল বাড়াতে ঘুষ, এনটিআরসিএ শিক্ষকদের থেকে চাঁদাবাজি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। দেখা দিয়েছে, শিক্ষার্থী সংকটসহ নানা সমস্যা। এসব বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
আরও প্রকাশ থাকে, ২০১৬ সাল থেকে তিন মেয়াদে ছোটখুদড়া মাদরাসার সভাপতি জহুরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর আলী বিশ্বাস। একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ পাটোয়ারী ২০২০ সালে সুকৌশলে অধ্যক্ষ এবিএম আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতি প্রদান করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসান সহকারী অধ্যাপক এনামুল হককে। ২০২২ সালে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মন্ডলকে মাদরাসার নতুন সভাপতি করেন। নুর মোহাম্মদ হন ওই কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এনামুল হক, সহকারী মৌলভী শামিনুর রহমান, শরীরচর্চা শিক্ষক এটিএম শামছুজ্জামান ও ইবতেদায়ী ক্বারী হারুন-অর-রশিদকে নিয়ে গড়ে তোলা হয় ধরাশায়ী ‘নুর মোহাম্মদ’ চক্র।
সর্বশেষ, গত ১৩ মার্চ নিয়মনীতি ছাড়াই গোপনে নুর মোহাম্মদকে মাদরাসার নতুন পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়। এতে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
এলাকাবাসীর পক্ষে প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগকারী আব্দুল্লাহ রানা বলেন, সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতিতে ছোটখুদড়া মাদরাসা আজ ধ্বংসের পথে। একটি চক্র প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের করে নেয়ার অপচেষ্টা করছিল। আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। চলমান অবৈধ কমিটি বাতিল হওয়ায় অভিভাবক ও এলাকাবাসী আনন্দিত।
অভিযোগের তদন্তকারী ও যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন জানান, তদন্তে অনুমোদিত কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের সত্যতা মেলে। সেই অনুযায়ী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কমিটি বাতিলের খবর পেয়েছেন। তবে অফিসিয়ালি চিঠিটা এখনো হাতে পাননি বলে জানান তিনি।