খুলনা সংবাদদাতা
খুলনা নগরীর আহসান আহমেদ সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমত। এজন্য ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কের দু’পাশে নতুন ড্রেন নির্মাণ করা হয়। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয় সড়ক। এর পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বৃষ্টি হলে আগের মতোই পানি জমছে সড়কটির একাংশে।
এতে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। শুধু আহসান আহমেদ সড়ক নয়, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় গত ছয় বছরে ১০৪টি ড্রেন পুননির্মাণ করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। ময়ূর নদসহ সাতটি খাল পুনর্খনন ও ৩২টি ড্রেনের সংস্কার চলছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০২ কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও নগরীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনও একটু বেশি বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর নিম্নাঞ্চল। প্রধান সড়কগুলোয় তৈরি হচ্ছে জলজট।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীতে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এই বৃষ্টিতেই নগরীর আহসান আহমেদ রোড, রয়েল মোড়, দোলখোলা, শান্তিধাম মোড়, খানজাহান আলী সড়ক, বাইতিপাড়া, বাস্তুহারা, চানমারী, লবণচরা, টুটপাড়া, মিস্ত্রিপাড়াসহ নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষকে। এর আগে ২ জুলাই দুপুর পৌনে ২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নগরীতে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ওই দিনও পানিতে তলিয়ে ছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা।
কেসিসির কর্মকর্তাদের দাবি, জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে সাময়িকভাবে পানি আটকে থাকে। এটাকে জলাবদ্ধতা না বলে জলজট বলা উচিত। সংস্কার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে এই জলজট ৬০ ভাগ কমে গেছে। সব কাজ শেষ হলে নগরীতে জলজট থাকবে না।
বৃষ্টি হলেই নিম্নাঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়া খুলনা নগরীর অনেক পুরোনো সমস্যা। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন খুলনার মানুষ। এজন্য ২০১৩ সালে নগর অঞ্চল উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে কেসিসি। এ প্রকল্পের আওতায় দুই নদী খননসহ অসংখ্য ড্রেন নির্মাণ করা হয়। প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ের পরও প্রকল্পটি জলাবদ্ধতা দূর করতে পারেনি। যার কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল জলাবদ্ধতা নিরসন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন হয় ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পটি। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। প্রকল্প ব্যয় কমে দাঁড়ায় ৮২৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মেয়াদ নির্ধারণ হয় ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পে ড্রেন নির্মাণ, খাল খনন, স্লুইসগেট, পাম্পহাউস নির্মাণসহ ১৭৭টি কাজ করার কথা ছিল। এর মধ্যে গত ছয় বছরে ১০৪টি ড্রেন ও খালের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলছে। কেসিসির গত মে মাসের প্রতিবেদনে প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৮২ শতাংশ। খরচ দেখানো হয়েছে ৫০২ কোটি টাকা।
সূত্রটি জানায়, ড্রেন নির্মাণ হলেও পানি নামার মূল পথ খালগুলো খননের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বর্ষাকালে পানি নিস্কাশনের জন্য পাম্পহাউস নির্মাণের কাজও শুরু হয়নি।
কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, গত ছয় বছরে গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। এতে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে গেছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু ড্রেনের কাজ চলছে। পাম্প স্টেশন ও স্লুইসগেট নির্মাণে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ দুটি কাজ শেষ হলে বৃষ্টিতে নগরীতে আর পানি জমবে না।
কেসিসির মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, নগরীর পানি রূপসা নদীতে গিয়ে পড়ে। রূপসার তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে পানি বের হতে পারে না। এজন্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপসায় একটি স্লুইসগেট ও পাম্পস্টেশন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলুতলা স্লুইসগেটেও পাম্পস্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এ দুটি স্টেশন হলে নগরীতে আর বৃষ্টির পানি জমবে না।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, শুধু ড্রেন নির্মাণ করলেই হবে না, এগুলো নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। বর্জ্য পড়ে অধিকাংশ নতুন ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কেসিসির নজরদারি কম। সঠিকভাবে তদারকির অভাবে বিপুল অর্থ ব্যয় কাজে আসছে না।