বাংলার ভোর প্রতিবেদক
জীবনের শেষ লগ্নেও বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন আহমেদ বুঁকবেঁধে আছেন কখন মামলা নিষ্পত্তি হবে। কথাগুলো বলছিলেন বীর সেনানীর বড় ছেলে আসিফ শাহারিয়ার সৌম্য।
তিনি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত যশোরের শহীদ মশিউর রহমান কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে ১৯৮৮ সালে এলএলবি পাস কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন আহমেদ। পরীক্ষার পর অধিভুক্ত কলেজগুলোর এলএলবি পরীক্ষা এবং খাতা মূল্যায়ন নিয়ে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। ওই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী রাবির আইন বিভাগের দুই শিক্ষককে যথাক্রমে ৭ ও ১২ বছরের জন্য খাতা দেখা থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ দেন। পরে ওই বছরের ৬ এপ্রিল পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলে আমার বাবা, মহিউদ্দীন আহমেদকে অকৃতকার্য দেখানো হয়। পরে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করে ব্যর্থ হয়ে মামলা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন।
একপর্যায়ে উত্তরপূর্ণ মূল্যায়নের জন্য আদালতের দ্বরস্থ হন তিনি। আদালত দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার পক্ষে রায় দিলে রাবি কর্তৃপক্ষ তাকে কৃতকার্য দেখায় এবং ২০০১ সালে তাকে এলএলবির সনদ প্রদান করে। এরপর তিনি ২০০২ সালের ২২ জুন রাবি কর্তৃপক্ষের কাছে মামলার খরচ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দাবি করে চিঠি দেন।
একই বছরের ২৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানায়, হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তাকে জানানো হবে। কিন্তু অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে করে বিষয়টির সুরাহা করতে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর, ৫ নভেম্বর, ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮ মার্চ রাবি রেজিস্ট্রারের দপ্তরেও আবেদন করেন ,আমার বাবা। প্রতিকার না পেয়ে ২০২০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেও আবেদন করেন আমার বাবা মহিউদ্দিন।আমার বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মঞ্জুরি কমিশিন রাবি কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়।
তাতেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় ২০২০ সালে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলেও কোনোরকম পদক্ষেপ না নেয়ায় ২০২১ সালে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমেদ। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে তাকে ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে ওই বছরের ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট হাইকোর্টের মুন্সি মহিউদ্দিন আহম্মেদকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়।
আদেশের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে রাবি কর্তৃপক্ষতে ক্ষতিপূরণের এ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হলে ৫ শতাংশ হারে ১৮ লাখ টাকার বার্ষিক সুদ দিতে হবে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে, যা চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি শেষে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের দেয়া আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেই চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হবে যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি মহিউদ্দীন আহমেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন কিনা।
জীবনের শেষ লগ্নেও তিনি আজও বুঁকবেঁধে আছেন কখন এই মামলা নিষ্পত্তি হবে।