বাংলার ভোর প্রতিবেদক
কোটচাঁদপুরে কথিত ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপের ড্রাইভারদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। এ ঘটনায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এর আগেও মটর শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা অফিসার ইনচার্জের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও চাঁদা আদায় বন্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। চাঁদাবাজরা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির রশিদ দিয়ে টাকা নিলেও রশিদে টাকার অংক উল্লেখ করছে না।
লিখিত অভিযোগে বলা হয় কোটচাঁদপুর শহরের আমবাজার সংলগ্ন মেইন সড়কের পাশে কোটচাঁদপুর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির নামে একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। এই ঘরকে পুঁজি করে শহরের সলেমানপুর দায়পাড়ার হাতকাটা সোহেলের নেতৃত্বে ৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গত দু’ বছর ধরে লোড পয়েন্ট থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ড্রাইভারদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে প্রায়ই শ্রমিকদের সাথে এ চক্রের বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাক মালিক ও স্থানীয় শ্রমিকরা বলছেন চাঁদা আদায় নিয়ে যে কোন মুহূর্তে উভয়পক্ষের মধ্যে ঘটতে পারে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।
চাঁদাবাজি এ চক্রের অন্যান্যরা হলেন সলেমানপুর গ্রামের নামদার পাড়ার মৃত আলমের ছেলে মিঠু, একই এলাকার দাউদ মন্ডলের ছেলে সোহাগ, আশাদুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল, হযরত আলীর ছেলে আব্বাস, গাবতলা পাড়ার চান্দুর ছেলে রাব্বি ও আদর্শপাড়ার মোর্শেদের ছেলে বাবু। ৭ জনের এ সিন্ডিকেটের মধ্যে মিঠু, সোহাগ, আশরাফুল ও আব্বাস শহরের চাঞ্চল্যকর জীবন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই বিকেলে কোটচাঁদপুর মেইনবাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির মাঠে ট্রাক লোডের সময় সিন্ডিকেট সদস্য রাব্বি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে জোরপূর্বক ট্রাক লোড বাবদ ৭শ’ টাকা আদায় করে। তিনি প্রথমে এ টাকা দিতে আপত্তি জানালে রাব্বি তার সাথে অসদাচরণ করে। ২০ জুলাই যশোর-ট-১১-২০৮৩ ট্রাক ড্রাইভার জিন্নাতকে মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে রাব্বি উক্ত ট্রান্সপোর্টের চালান ধরিয়ে দেয়। ২৩ জুলাই মেইনবাসস্ট্যান্ডে হামিদুল ড্রাইভারের কাছ থেকে রশিদ দিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায় করে।
এ সময় হামিদুলের সাথে সিন্ডিকেট সদস্যের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এভাবেই ড্রাইভার রফিকুল ইসলাম, জাকির হোসেনের কাছ থেকেও জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। গত ৩ মে ঢাকা-মেট্রো-ট-২৪-১৭৭৮ নম্বর ট্রাকের ড্রাইভার ফারুক হোসেন কথিত ট্রান্সপোর্ট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করে কোটচাঁদপুর থানা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। দেশের বৃহত্তম আম বাজার হিসেবে পরিচিত মৌসুমী ফলের আড়ৎ থেকেও চাঁদাবাজি করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। এছাড়া আমের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন এ বাজার থেকে ৮০ থেকে ১০০টি ট্রাক-পিকআপ ফল বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে থাকে। এখানে সিন্ডিকেটের লোক ট্রাক প্রতি প্রকারভেদে ১শ’ ৫০টাকা থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত লোডের টাকা আদায় করছেন।
থানা থেকে আম বাজারের দূরত্ব সর্বোচ্চ ১শ’ মিটার। অথচ কোনভাবেই চাঁদা বন্ধ হচ্ছে না। চাঁদাবাজির ঘটনায় গত ১৭ জুলাই কোটচাঁদপুর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ মালিক ও ড্রাইভাররা কোটচাঁদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্না বিশ্বাস ও থানা অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আল মামুনকে বিষয়টি অবহিত করেন। এদিকে গত ২৪ জুলাই দুপুরে কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিন্ডিকেটের এ চাঁদাবাজির বিষয়টি স্থানীয় এক সাংবাদিক উত্থাপন করেন।
এ সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সালাহ উদ্দিন মিয়াজী, উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুন্নেছা মিকি, পৌর মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্না বিশ্বাস ও থানা অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন। চাঁদাবাজির বিষয়ে ওই সাংবাদিক সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম সাংবাদিকের বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করেন। সাথে সাথে তিনি এ সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজির বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেন। সংসদ সদস্য বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিলেও এ রিপোর্ট লেখা (৩ আগস্ট) পর্যন্ত চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। এদিকে গত ২৪ জুলাই ভুক্তভোগী স্থানীয় মটর শ্রমিক ইউনিয়নের ৫১ জন শ্রমিক ও ২৩ জন মালিকের পক্ষ থেকে এ সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধের দাবিতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
কোটচাঁদপুর মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন যাবত এ সিন্ডিকেট সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ট্রাক-পিকআপ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। বিষয়টি শ্রমিকদের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করলেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর-মহেশপুর মটর শ্রমিক ইউনিয়নের (১৭৪) সাধারণ সম্পাদক রজব আলী মন্টু এ অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদ জানিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর থানা অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আল মামুন বলেন, এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। দেশের পরিস্থিতি শান্ত হলে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।