বাংলা ভোর প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল যশোর। তাদের মিছিলের এক দফা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা শহর। রোববার দুপুর সাড়ে ১২দিকে বিশাল এ মিছিলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও অংশ নেয়। এদিকে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদে দিনভর বিক্ষোভ প্রতিবাদ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এসব কর্মসূচি থেকে এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিতে সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা চাঁচড়া চেকপোস্টমোড়ে সমাবেত হতে থাকে। দুপুর ১২টায় বিশাল মিছিলটি শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সাড়ে ১২টায় বিক্ষোভ মিছিলটি ঈদগাহ মোড় হয়ে এমএম আলী রোড দিয়ে চিত্রামোড়ের দিকে চলে যায়। আধাঘন্টার বেশি সময় ধরে মিছিলটি ঈদগাহ মোড় অতিক্রম করে। সড়কে অনেকের ধারণা মিছিলে প্রায় পনেরো সহস্রাধিকের বেশি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ অংশ গ্রহণ করে। মিছিলের স্লোগানে সবার এক দফা দাবি ছিল সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ। অবশ্য শান্তিপূর্ণ এ মিছিলে পুলিশের বাধা দিতে দেখা যায়নি।
সন্তান হত্যার বিচার চাইলেন যশোরের মায়েরা:
সন্তান হত্যার বিচার, হুমকি, হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে যশোরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা। রোববার বেলা ১২ টার দিকে প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে ‘সন্তানের জন্য মা’ শিরোনামে এই মানববন্ধন হয়। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা, হত্যা ও গণপ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানান। অনেক পুরুষও নারীদের এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে যোগ দেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া মায়েরা এ সময় বিভিন্ন স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।
‘বুকের ভিতর দারুণ ঝড়, সন্তান হত্যা বন্ধ কর’ সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধনে বক্তব্যে দেন গৃহিনী সালমা আক্তার। শহরের বেজপাড়া থেকে আসা এ মা সারাদেশে শিক্ষার্থীদের উপর গুলির বর্ণননা দিতে যেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার দুই সন্তান। দুই সন্তানই ঢাকাতে পড়াশোনা করে। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বলি, তোমরা আন্দোলনে যাবা না। কিন্তু আমার সন্তানরা কথা শুনে না। তারা বলছে, আমার ভাইযেরা, বোনেরা আমাদের জন্য আন্দোলনে যেয়ে জীবন দিয়েছে। তাদের বিচারের জন্য আমরাও এখন রাজপথে নেমেছি।’ রত্না বেগম নামে আরেক গৃহিণী বলেন, আমার সন্তান রক্তাক্ত হয়েছে মানে আমরাও রক্তাক্ত। এই স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের সন্তানদের গণকবর দেওয়া হয়। আমরা কার কাছে বিচার চাইব। এ রাষ্ট্রই তো আমাদের সন্তানকে হত্যা করেছে।’
কল্পনা আক্তার বর্ণা নামে আরেক নারী বলেন, আমরা সন্তানদের রোডে ছেড়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য আমরাও রাস্তায় নেমে এসেছি। আমরা কোনো রাজনৈতিক দাবি নিয়ে আসিনি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে এসেছি। জুলেখা নামে আরেক নারী বলেন, দেশের কোন পরিস্থিতি হলে মায়েরা রাজপথে নামে? এত হত্যা আর গণগ্রেপ্ততার হলো, তার পরও এইচএসসি পরীক্ষার্থী যারা আটক হয়েছে তাদের জেলে পরীক্ষার কথা বলছে। ওরা তো শিশু। আমাদের শিশুরা কেন বিনা অপরাধে জেলে পরীক্ষা দেবে?’
আরেক অভিভাবক তসলিমা বলেন, ‘আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে পুলিশ আমাদের সন্তানকে হত্যা করে। আমি বলতে চাই, সন্তানকে না মেরে আমাদের মেরে ফেলুন। ওরা আমাদের ভবিষ্যৎ। আপনারা ভবিষ্যৎকে হত্যার নেশায় মেতে উঠেছেন। এই জুলুম বন্ধ করেন।’
রাজপথে বিভিন্ন সংগঠন:
এর আগে, সকালে প্রেস ক্লাবের সামনে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করে হত্যা, হামলা নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) যশোরের নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধন বক্তরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা নির্যাতন ও হত্যার বিচারের দাবি জানান।
বিকেলে প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্র জনতা হত্যার বিচার ও রোড ব্লক করে গণগ্রেফতার বন্ধ ও আটকদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করে যশোরের নাগরিক সমাজের আয়োজনে এই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি বিভিন্ন শ্রেণী পেশা মানুষের সঙ্গে বাম ও বিএনপির রাজনৈতিক সঙ্গে জড়িত নেতৃবৃন্দরাও অংশ নেয়। যশোরের প্রবীন শিক্ষাবিদ প্রফেসর আফসার আলী। জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলুর পরিচালনায় মানববন্ধন চলকালে বক্তব্য রাখেন, দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক শান্তনু ইসলাম সুমিত, খুলনা সুন্দরবন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ইসরাউল হক, যশোর সদরের রূপদিয়া শহীদ স্মৃতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আইয়ুব হোসেন, সাংস্কৃতিক ও চিত্রশিল্পী মফিজুর রহমান রুন্নু প্রমুখ।