স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সারাদেশের মত যশোর শহরেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। দিনের বেলা কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা দেখা গেলেও রাতের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমনকি গত দুই দিন ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি জড়িত অনেক পরিবারও নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে। চারিদিকে অগ্নিকাণ্ড, মারামারি, লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে এলাকা ভিত্তিক কিছু অছাত্র ও সুবিধাবাদি মানুষ ভিন্ন মতের মানুষের উপর অনাকাঙ্খিত হামলা ও নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা সংঘবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন এলাকায় লুটপাট ও নৈরাজ্যের মত ঘৃণ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে করে ছাত্র আন্দোলনে অর্জিত বিজয় সাধারণ মানুষের কাছে ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করেছে। রাতের বেলা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছেন না সাধারণ জনগণ। এনিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে জনমনে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নেতাকর্মীরা এলাকা ভিত্তিক নৈরাজ্য প্রতিরোধ করতে সচেতনতা গড়ে তুলছেন।
বুধবার বিকেলে যশোর শহরের দড়াটানা, চিত্রার মোড়, হাসপাতাল মোড়, নিউমার্কেট, মণিহার এলাকায় বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তবে তাদের এই কাজের দক্ষতা বা পূর্ব অভিজ্ঞগতা না থাকাতে যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয়। কথা হয় হাসপাতাল মোড়ে স্বেচ্ছায় দায়িত্বপালনরত ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী রোভার সদস্য আল হেলাল মাহমুদের সাথে। তিনি বলেন, মানুষের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যানজট নিরাসনে কাজ করছেন তারা। মানুষের উৎসাহ ও সহযোগিতা পাচ্ছি। নিজেদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি কাজ করার।
এদিকে, শহর পরিচ্ছন্নতার জন্য ঝাঁড়ু হাতে বেশ কিছু ছাত্র জনতাকে দেখা মেলে। তারা রাস্তা, ফুটপাত পরিস্কারের কাজ করছেন। কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তারা বলেন কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দেশ সংস্কারে নেমেছেন তারা। যে কারণে শহর পরিস্কার করছেন। এদিকে শহর পরিস্কার করলেও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য থেকে উঠানো হয়নি লাল রং। যশোর জেলা পরিষদের ভিতরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, দিনের বেলা ভালো কাটলেও রাতে আতঙ্কে সময় পার করতে হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় কিছু বখাটে লুটপাট করছে। প্রত্যন্ত এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আঘাত করা হচ্ছে। এখন নাকি দেশে কোনো আইন নেয়। তাই সুযোগে সৎ ব্যবহার করছে কিছু অসাধুচক্র।
যশোর জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. ইমরান খান বলেন, শিক্ষার্থীদের রক্তে অর্জিত এই বিজয় কলুষিত করছে একটা পক্ষ। আমরা যশোর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এলাকা ভিত্তিক প্রতিরোধ ,জনমত গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চলমান লুটপাট,অগ্নিসংযোগের সাথে কোনো ভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়িত নয়। দ্রুত দেশে কেয়ারটেকার সরকার গঠন হলে এই সংকট কেটে যাবে।
গণতান্ত্রিক বাম জোট যশোরের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, আন্দোলন পরবর্তী লুটপাট, সংখ্যা লঘুদের উপর নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের বিষয়ে নিন্দা জানান। তিনি প্রত্যেক মহল্লায় বা এলাকায় সচেতন মানুষদের সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ করেন।