বাংলার খেলা ডেস্ক
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিনে বৃষ্টি কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। উইকেট ধীরে ধীরে ধূসর হতে শুরু করেছে। এই উইকেটে শুরু থেকেই সুবিধা পেয়েছেন ব্যাটাররা। পাকিস্তানের ৪৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণার পর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ মনে হয় বেশিদূর এগোতে পারবে না। তবে সেই ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লিডের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।
তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের একমাত্র আক্ষেপ সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি না পাওয়া। এই ওপেনিং ব্যাটার ৯৩ রানে আউট হয়েছেন। এরপর কয়েকটা উইকেট হারালেও শেষ বিকেলটা বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। এই দুজনের ব্যাটে ভর করেই সফরকারীরা দিন শেষ করেছে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩১৬ রান নিয়ে। দুজনই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। মুশফিক ৫৫ ও লিটন ৫২ রান করে অপরাজিত আছেন। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এখনও ১৩২ রানে পিছিয়ে রয়েছে।
তৃতীয় দিনের শুরু থেকে বেশ আস্থার সঙ্গেই খেলছিলেন জাকির হাসান। শাহীন শাহ আফ্রিদি-নাসিম শাহদের গতির বল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই ছেড়ে দিচ্ছিলেন তিনি। যদিও নাসিম শাহ’র পাতানো ফাঁদেই পা দেন জাকির। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়েছিলেন ৫৮ বলে ১২ রান করা জাকির।
বাম দিকে ঝাঁপিয়ে প্রায় প্রথম স্লিপ বরাবর পজিশন থেকে ক্যাচ নেন রিজওয়ান। তৃতীয় দিনের পঞ্চম ও ইনিংসের ১৭তম ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩১ রান। এরপর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দুটি চারে ৪২ বলে ১৬ রান করে ফেরেন তিনি। খুররম শাহজাদের অ্যারাউন্ড দা উইকেট থেকে করা ইনসুইং ডেলিভারিতে স্ট্যাম্প ভাঙে তার।
অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েও লাভ হয়নি তার। দলীয় ৫৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় টাইগাররা। ৫২ রানে দুই উইকেট হারানোর পর সাদমান ইসলাম এবং মুমিনুল ইসলামের ব্যাটে ছন্দ খুঁজে পায় বাংলাদেশ। দুজনই বেশ দেখেশুনে খেলতে থাকেন। দেখতে দেখতে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাদমান। প্রায় আড়াই বছর পর টেস্ট খেলতে নামা বাঁহাতি এই ওপেনারের এটি তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি।
২ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। ৪৫ রানে অপরাজিত থেকে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে গিয়েছিলেন মুমিনুল। তিনি বিরতির পরই ৭৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। শাহজাদের বলে ইনসাইড এজ হয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে চলে যায় বল। সেই সুযোগে সিঙ্গেল নিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মুমিনুল। এটি তার টেস্টে ১৯তম হাফ সেঞ্চুরি। শাহজাদের পরের ওভারেই অফ স্ট্যাম্পে করা বল ডিফেন্স করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন মুমিনুল।
এরপর সাদমান বেঁচেছেন রিভিউ নিয়ে। আঘা সালমান বলের লাইন মিস করেছিলেন সাদমান। বল সোজা আঘাত করে তার প্যাডে। একটু সময় নিয়ে বাংলাদেশি এই ব্যাটারকে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার আড্রিয়ান হোল্ডস্টক। তবে সাদমান রিভিউ নিলে দেখা যায় বল অল্পের জন্য স্টাম্প মিস করে যেত। ফলে ৫৭ রানে বেঁচে যান সাদমান।
জীবন পেয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকেন তিনি। এগিয়ে যেতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে। তবে ব্যক্তিগত ৯৩ রানে মোহাম্মদ আলীর গুড লেন্থের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে আউট হন সাদমান। আর তাতেই ১৯৯ রানে বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে মাত্র ১৮ ওভার খেলা হয়েছে ৬৫ রান তোলার সঙ্গে দুটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শেষ সেশনে নতুন ব্যাটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন মুশফিকুর রহিম। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব। তিনি মাত্র ১৫ রান করে সাইম আইয়ুবের বলে এগিয়ে গিয়ে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে কাভারে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। এর ফলে মুশফিকের সঙ্গে তার ১৯ রানের জুটি শেষ হয়। এরপর নতুন ব্যাটার হিসেবে মুশফিকের সঙ্গে যোগ দেন লিটন।
এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস টেনেছেন মুশফিক। আফ্রিদিকে মিড অফ দিয়ে চার মেরে ১০৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এটি তার ২৮তম হাফ সেঞ্চুরি। এই ইনিংস খেলার পথেই দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার রানের মাইলফলকেও পৌঁছেছেন এই ব্যাটার।
দিনের শেষ বেলায় নাসিম শাহর ওপর চড়াও হয়েছিলেন লিটন। সেই ওভারে তিনটি চার ও একটি ছক্কা মারেন লিটন। ওভারের প্রথম বলেই মিড অফ দিয়ে উড়িয়ে চার মারেন তিনি। পরের বলে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে আরেকটি চার মারেন এই ব্যাটার। আর চতুর্থ বলে ডান দ্য উইকেটে এসে ব্যাকওয়ার্শ স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মারেন লিটন। বল চলে যায় মাঠের বাইরে। আর তাতেই দলীয় ৩০০ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ।
পঞ্চম বলে স্কয়ার দিয়ে পুল করে মাত্র ৫২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। সেই ওভারে মোট ১৮ রান খরচা করেন নাসিম। দিনের শেষ বেলায় আর কোনো উইকেট হারাতে দেননি মুশফিক ও লিটন। এই দুজন অবিচ্ছিন্ন ৯৮ রানের জুটি গড়ে দিনের খেলা শেষ করেছেন।