ঝিনাইদহ সংবাদদাতা
রাজনৈতিক বিরোধ ও সামাজিক কোন্দলে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় খুন হয়েছেন অন্তত ১১৫ ব্যক্তি। এসব হত্যাকাণ্ডে আসামি করা হয়েছে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়াও বহু নিরপরাধ মানুষকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানলে পড়ে পথে বসেছে অনেক পরিবার। অনেকে বাপ-দাদার পৈতৃক ভিটা ছেড়ে চলে গেছে অন্য এলাকায়।
এমনকি অনেক নিহতের পরিবারকেও এলাকা ছাড়তে হয়েছে। হত্যাকারীরা তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হওয়ায় অবাধে চলেছে এসব অপরাধ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১০ সালে শৈলকুপায় ১৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। ২০১১ সালে ৯টি, ২০১২ সালে আটটি, ২০১৩ সালে ৯টি, ২০১৪ সালে ১৭টি, ২০১৬ সালে আটটি, ২০১৭ সালে সাতটি, ২০১৮ সালে সাতটি, ২০১৯ সালে পাঁচটি, ২০২০ সালে আটটি, ২০২১ সালে ছয়টি, ২০২২ সালে সাতটি, ২০২৩ সালে ছয়টি ও চলতি বছর একজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
দেড় দশকে শৈলকুপার আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে চলতি বছরের ২৪ জুলাই কাশীনাথপুর গ্রামের কলেজছাত্র রানা মণ্ডল হত্যা, ২০২৩ সালের ২৪ অক্টোবর ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান রিপন হত্যা, ২০২২ সালের ৮ জানুুয়ারি বগুড়া গ্রামের কল্লোল হত্যা, ৫ জানুয়ারি কৃত্তিনগর গ্রামের অখিল কুমার হত্যা, ৩১ জুলাই পুরাতন বাখরবা গ্রামের জানিক হত্যা, ২০২১ সালের ২৫ জুলাই দামুকদিয়া গ্রামে উকিল মৃধা হত্যা, ১০ নভেম্বর যুগিপাড়া গ্রামের মিজানুর হত্যা ও একই বছরের ১৭ এপ্রিল রতন মণ্ডল হত্যা, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ভাটবাড়িয়া গ্রামের সুফিয়া বেগম হত্যা ও বৃত্তিপাড়া গ্রামের মোখলেসুর রহমান পাইলট হত্যা, একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর চররূপদাহ গ্রামের রিপন হত্যা, ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট পাইকপাড়া গ্রামের পরিজান নেছা হত্যা, ২০১৭ সালের ২৯ জুন বড়দাহ গ্রামের মনিরুদ্দীন হত্যা, ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি কবিরপুর এলাকায় শাহিনুর হত্যা, ২০১৩ সালের ১১ জুলাই সাধুখালী গ্রামের ফরেজ আলী হত্যা, ২০১২ সালের ১৩ অক্টোবর চড়িয়ারবিল বাজারের মাসুদ হত্যা, একই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ফুলহরি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইদ্রিস হত্যা, ভাটইবাজারে সার ডিলার আব্দুল লতিফ হত্যা ও ২০১০ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মণদিয়া গ্রামের আবুল হাসেম হত্যা।
শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর আমাদের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। ফলে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছিল শৈলকুপা। আমি দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয় সামাজিক মাতবরদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘বিচারহীনতার কারণে শৈলকুপায় একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এসব হত্যার শিকার পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এর দায় এড়াতে পারেন না।’
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, ‘শৈলকুপার সামাজিক কোন্দল নিরসনে আমরা কাজ করছি।
ফলে গত দুই বছরে হত্যাকাণ্ড কম ঘটেছে। আশা করছি, খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।’