বিশেষ প্রতিনিধি
খুলনা জেলার পাইকগাছায় উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। গত ২২ আগস্ট বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে গ্রামবাসী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড বার বার বেড়িবাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করেও নদীতে জোয়ার ভাটার কারণে সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে ব্যর্থ হন তারা।
ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের লোকালয়ে পানি প্রবেশের পর এসকল গ্রামের কাঁচা ও কাঠের ঘরবাড়ি ধসে গেছে। পার্শবর্তী সাইক্লোন সেন্টারসহ বিভিন্ন বহুতল স্কুল কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারো মানুষ। আবার অনেকের ঘর বাড়ি পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গাপুর থেকে হরিণখোলা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পাকা রাস্তার দুপাশে। রাস্তার দুপাশে তাবু টাঙিয়ে গবাদি পশু নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ এলাকার বাসিন্দারা। আবার অনেকে গ্রামের মধ্যে পানিবন্দি অবস্থায় আটকে পড়ে আছেন।
গত ২৭ আগস্ট দেলুটি ইউনিয়নের দূর্গাপুর, হরিণখোলা, দারুণ মল্লিকসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। পানিবন্দি এসকল মানুষের পাশে দাঁড়াতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে আসছেন। কেউ কেউ পানিবন্দি এলাকায় ত্রান সামগ্রি এবং খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে আবার কেউ কেউ রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন।
তবে এ সকল এলাকা পুরোপুরি নেটওয়ার্ক বিছিন্ন হয়ে পড়ায় বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছেন না অনেকেই। যারা জানতে পারছেন না তারা শুকনা খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছেন। আবার যারা কোন মাধ্যমে জানতে পারছেন তারা চাল, ডাল, আলু, তেল ইত্যাদি রান্না উপযোগী উপকরণ নিয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম করছেন।
হরিণখোলা গ্রামের উচু রাস্তায় আশ্রয় নেয়া বন্যার্তরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, অনেকেই ত্রাণ নিয়ে আসছেন এর মধ্যে বেশিরভাগই শুকনা খাবার। আমরা তো এখন উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা এখন রান্না করতে পারছি এজন্য আমাদের চাল, ডাল, আলু, তেল ইত্যাদি প্রয়োজন। শুকনা খাবার খেয়ে আর পারছি না।
অশোক দাস নামে এক ব্যাক্তি বলেন, গত তিন দিন ধরে রাস্তায় তাবু টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এরপর থেকে শুকনা খাবার খাচ্ছি। অনেকে চাল, ডাল, তেল নিয়ে আসছেন, তবে সেটার পরিমাণ কম হওয়ায় আমরা অনেকেই তা পাচ্ছি না।
নীলিমা ঠিকাদার বলেন, ‘বাচ্চারা আর চিড়া মুড়ি খেতে চাচ্ছে না। ভাতের ক্ষুদা চিড়া মুড়িতে যায় না। যারা ত্রাণ নিয়ে আসছেন তাদের কাছে অনুরোধ আপনারা রান্না করার জন্য খাদ্য সামগ্রি নিয়ে আসুন। আমরা ভাত খেতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের গবাদি পশুও রাস্তার ওপর এগুলোও না খাওয়া। গবাদি পশুরও খাবারের অভাব। অনেক পশু মারা গেছে সেগুলো পানিতে ভাসছে।’
দারুন মল্লিক গ্রামের সুনীল নামে এক শিক্ষক বলেন, ত্রাণের গাড়ি এই ছোট রাস্তায় ঢুকে অনেক দুর্ঘটনায় পড়ছে। এ সকল গাড়ি ফুলবাড়ি বা দুর্গাপুর পর্যন্ত এসে ভ্যানে বা হাতে করে ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে ঢুকতে হবে। কিন্তু বাইরের জেলা থেকে যারা ত্রাণ নিয়ে আসছেন তারা ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত না থাকায় অনেক ত্রাণের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ছে।
এছাড়া গ্রামের ভেতরে অনেক জায়গায় হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি, ওই সকল এলাকায় নৌকায় করে ছাড়া যাওয়া যাচ্ছে না। নৌকার সংকট হওয়ায় অনেক ত্রাণ নিয়ে আসা স্বেচ্ছাসেবকরা ওই সকল এলাকায় ঢুকতে পারছে না ফলে ত্রাণ সামগ্রী পাচ্ছে না গ্রামের ভেতরে আটকে থাকা মানুষগুলো।
দেলুটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান যারা ত্রান সামগ্রী নিয়ে বসতে চান তাদের কাছে অনুরোধ তারা রান্না উপযোগী খাবার অথবা রান্না খাবার নিয়ে আসুন। এছাড়া গ্রামের মধ্যে নৌকা, ট্রলার নিয়ে আটকে পড়া মানুষের মাঝেও খাদ্য ও পানি পৌছে দিন। এখন শুকনা খাবারের প্রয়োজন নেই। এখন তাবু, চাল, ডাল, তেল আলু, পিয়াজ, পানিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রয়োজন।