বাংলার ভোর ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরেকটি আবেদন জমা পড়েছে, যাদের মধ্যে ২৯ জন সাংবাদিকও রয়েছেন। আন্দোলনে নিহত রিয়ানের বাবা গোলাম রাজ্জাক বৃহস্পতিবার এ আবেদন করেন বলে আইনজীবী এম এইচ গাজী তামিম জানিয়েছেন। আইনজীবী তামিম বলেন, ৫ অগাস্ট দুপুরে শ্যামলীর রিং রোডে বিজয় মিছিলে গুলিতে নিহত হয় গোলাম রাজ্জাকের ছেলে নাসিব হাসান রিয়ান। এ ঘটনায় গোলাম রাজ্জাক ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থায় এ অভিযোগ দায়ের করেন।
এ মামলার আসামির তালিকায় থাকা ১৩ রাজনীতিক হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন- সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি হারুন আর রশীদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, র্যাবের সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও আদাবর থানার সাবেক ওসি মাহাবুব রহমান।
সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, শিক্ষাবিদ, লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আইনজীবী ও অনলাইন আক্টিভিস্ট নিঝুম মজুমদার এবং ইতিহাসের অধ্যাপক মেসবাহ কামালকে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।
সাংবাদিকদের মধ্যে আসামির তালিকায় আছেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি ফরিদা ইয়াসমিন, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির মোজাম্মেল বাবু, সঞ্চালক নবনীতা চৌধুরী, এবি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সুভাষ সিংহ রায়, সময় টিভির আহমেদ যোবায়ের, এখন টিভির তুষার আব্দুল্লাহ, যুগান্তরের সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, সমকালের সাবেক সম্পাদক আবেদ খান, এটিএন নিউজের সাবেক বার্তা প্রধান প্রভাষ আমিন, একাত্তর টিভির ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ ও মিথিলা ফারজানা; ডিবিসি নিউজের মঞ্জুরুল ইসলাম, জাহেদুল হাসান পিন্টু ও প্রণব সাহা; ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির আশীস সৈকত, এশিয়ান টিভির মানস ঘোষ, সাংবাদিক ও সাবেক তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি, এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী মুন্নী সাহা, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী জ ই মামুন, জনকণ্ঠ’র নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, চ্যানেল আইয়ের সোমা ইসলাম, ইত্তেফাকের শ্যামল সরকার, অজয় দাশ (সমকাল) এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন।
এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আটটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায়, একটি ২০১৩ সালে শপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর সমাবেশের ঘটনায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ আদালতের রায়ের পর চূড়ান্ত বিচার শেষে পাঁচ জামায়াত নেতা এবং এক বিএনপির নেতার ফাঁসিও কার্যকর করা হয়। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্র্বতী সরকার এখন জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে ওই ট্রাইব্যুনালেই বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে।