বাংলার ভোর প্রতিবেদক
এক দশক ধরে যশোর চেম্বার অব কমার্সের ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের রশি টানাটানি চলছেই। ফলে দীর্ঘদিন নির্বাচিত অভিভাবক শূণ্য প্রতিষ্ঠানটি। প্রশাসক দিয়েই চলছে কার্যক্রম। অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে বারবার হস্তক্ষেপ করে নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচন ভেস্তে দিতেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী ও শীর্ষনেতারা আত্মগোপনে আছেন। রাজনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তন হওয়ায় চেম্বারের ভোট নিয়ে তৎপর হয়েছে বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর ভোট গ্রহণ হবে। এর আগে কোণঠাসা করে নির্বাচন আয়োজন করায় বিপাকে পড়ে বিএনপিপন্থীরা। এবার ফাঁকা মাঠে ভোটের আয়োজন করায় নাখোশ আওয়ামীপন্থীরা।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চেম্বারের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাপে এতদিন চেম্বারটিকে কুক্ষিগত রাখা হয়েছিল। অভিভাবকশূন্য ছিল যশোরের ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন পর আবার নির্বাচনের তফশিল হওয়ার ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেবেন। তিনি বলেন, গতবার নির্বাচনের আগে আমাদের ব্যবসায়ীদের উপর হামলা, মামলা দেয়া হয়েছিল। সেটা স্বত্বেও আমরা নির্বাচনে অংশ নিই। তারপরও আমরা মনে করি আওয়ামীপন্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেম্বারের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘এই পরিস্থিতি নির্বাচন সম্ভব না। আইনশৃঙ্খলা অবনতি, আমাদের ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা হয়ে রয়েছে। জনগণ ভয়ে ভিত। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ায় এই নির্বাচন বিএনপি ছিনতাই করে নিয়েছে।’
জানা যায়, রাজনৈতিক প্রভাব ও আদালতে মামলা থাকার কারণে গত একযুগ ধরে যশোর চেম্বারের নির্বাচন হয় না। ১০ বছর ধরে প্রশাসক নিয়োগ করে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনটির কার্যক্রম চলছে। ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল যশোর চেম্বারের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জেলা বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল জয়ী হয়। ২০১২ সালের ৩ মার্চ মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়িত্ব বুঝে পায়। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ওই বছরের ১২ জুলাই ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচন ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপালন করছেন একজন প্রশাসক। ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দুই দিন আগে বিএনপিপন্থী প্যানেলের নেতা মিজানুর রহমান খানকে পুরনো একটি মামলায় আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীরা। তারপরেও ভোটের মাঠে সুবিধা না করতে পারায় আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ী মেসার্স পারভেজ ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান (ভোটার নম্বর-৬৪২) সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। বিচারক সুজাতা আমিন স্থগিতাদেশ ও বিবাদীদের এক কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে শুনানিতে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন। ওই মামলার কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। পরে মামলা নিষ্পত্তি হয়। চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর আপিল বোর্ড ও নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়। সংস্থার প্রশাসক ও যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শাহীন সাক্ষরিত এক পত্রে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আপিল বোর্ডের আহবায়ক করা হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আনোয়ার হোসনেকে নির্বাচন বোর্ডের আহবায়ক করা হয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। আগামী ৩০ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১৯ অক্টোবর মনোনয়নপত্র বিক্রি হবে। ২৬ অক্টোবর মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ৯ নভেম্বর।
এদিকে, গত ২৭ আগস্ট যশোর চেম্বার অব কমার্সের প্রশাসকের মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব অমিত দেবনাথ সাক্ষরিত এক পত্রে প্রশাসকের মেয়াদ ৪ মাস (১২০ দিন) বৃদ্ধি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়। নির্বাচনের ৯০ দিন পূর্বে ৩ সদস্যের নির্বাচন বোর্ড গঠন এবং ৮০ দিন পূর্বে তফসিল ঘোষণা করতে বলা হয়। যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও চেম্বারের প্রশাসক এসএম শাহীন বলেন, আগামী ৩০ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।