বাংলার ভোর প্রতিবেদক
জুলাই বিপ্লবে ছাত্ররা যখন আন্দোলন ও দেশ গড়তে ব্যস্ত সময় পার করছে, তখন এক শ্রেণির নব্য ফ্যাসিস্ট হামলা, লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দখলদারিত্ব, লুটপাট বন্ধ না করলে আপনাদেরও স্বৈরাচার সরকারের মত দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। গত ১৭ বছরে আপনারা যা পারেননি, ছাত্ররা তা করে দেখিয়েছে, এটা ভুলে গেলে চলবে না। রোববার বিকেলে যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের রুপরেখা ও আমাদের ভাবনা” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কবৃন্দ এই মন্তব্য করেন। সভায় কেন্দ্রীয় ১০ সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আকরাম হুসাইন ও যশোরের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান সোহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াহিদ উজ্জামান, আশরেফা খাতুন, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু বকর খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারহানা ফারিন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুইনুল ইসলাম, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের বিশ^জিৎ দত্ত, এনইউবি’র তৌহিদ ইসলাম শুভ, ডিআইইউ’র বাবু খান, বদরুন্নেসা কলেজের জান্নাত। স্বাগত বক্তব্য দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের অন্যতম সমন্বয়ক ইমরান খান, মারুফ হাসান ও আব্দুল্লাহ আল লাইস।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র জনতার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ১০ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক টিম। প্রশ্ন উত্তরে সমন্বয়কবৃন্দ বলেন, নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আমরা প্রতিনিধি নির্বাচন করছি। এই প্রতিনিধিরা অনিয়ম করলে আপনারা সেটি তুলে ধরতে পারেন। নির্বাচিত সরকার আসার আগে আমরা দেশের সিস্টেম পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি। দেশ সংস্কারের পর আমরা পুনরায় পড়ার টেবিলে ফিরে যাবো। আমাদের ভিতরে মিশে থাকা ফ্যাসিবাদি সরকারের দোসরদের চিহ্নিত করে প্রশাসনের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। সমন্বয়ক মানে আলাদা কিছু না। আমরাও আপনাদের মত সাধারণ শিক্ষার্থী। আমাদের শিক্ষা খাতে সংস্কার করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষকদের মধ্যকার রাজনীতি দূর করতে এই সরকার কাজ করছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালু করা হবে। পড়াশুনা করে চাকুরির পিছনে না দৌঁড়িয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান জানান তারা।
সমন্বয়কবৃন্দ আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ফ্যাসিবাদ কাঠামো দূর করা। আমরা ফ্যাসিবাদির পতন চেয়েছিলাম, ব্যক্তি শেখ হাসিনার পতন না। গত ৫ আগস্টের পর নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে। তাদের উৎখাত না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো। আলেমরা চাইলে রাজনীতিতে আসতে পারেন। শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগে জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার বিচার করবে সরকার। পরে ধারাবাহিকভাবে সকল হত্যা, দুর্ণীতি ও অনিয়মের বিচার করা হবে।
শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কবৃন্দ বলেন, সামনে হয়ত নতুন একটা রাজনৈতিক সংগঠন আসবে। তবে সেটি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে না। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংবিধান সংশোধন করা হবে। এই সরকার অবশ্যই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছে।
ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান, স্বরচিত গানের পরে আলোচনা শুরু হয়। সভায় জুলাই বিপ্লবে ঢাকার রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত কেশবপুর উপজেলার শিক্ষার্থী তৌহিদের পিতা জব্বার আলী ও গুরুতর আহত শার্শা উপজেলার শিক্ষার্থী নূর হুসাইনের বোন সুরাইয়া ইসলাম বক্তব্য রাখেন। তারা শিক্ষার্থীদের সাথে হওয়া অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে অনুরোধ করেন।