বাংলার ভোর প্রতিবেদক
লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দেয়ার সরকারি নির্দেশনার এক মাসের বেশি সময় পার হলেও যশোরে ৩৪টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয়নি। এই তালিকায় রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা, রাজনীতিক নেতা ও ব্যবসায়ী। আলোচিত রাজনৈতিক নেতা যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পিস্তল জমা হয়নি। যদিও তার লাইসেন্সধারী রাইফেলটি জমা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না দেয়ায় সেগুলো এখন অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য। ওই অস্ত্রের মালিকরা আত্মগোপনে কিংবা এলাকায় নেই। এমনকি তাদের ফোন নম্বরও বন্ধ পাচ্ছে পুলিশ। এসব অস্ত্র বেআইনি কাজে ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন যশোরের সচেতন সমাজ।
জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার একটি রাইফেল ও একটি পিস্তলের লাইসেন্সে নেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে আত্মগোপনে চলে যান শাহীন চাকলাদার। সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন আত্মগোপনে। ৫ আগস্ট বিকালে দুবৃর্ত্তরা তার শহরের কাজিপাড়াস্থ তিনতলা বিশিষ্ট বাড়িতে আগুন লুটপাট করে দুবৃর্ত্তরা। এসময় দৃবৃর্ত্তরা সেই বাড়িতে কৌশলে থাকা অস্ত্রটি লুট করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। তবে অস্ত্র লুট হলেও এখনো থানায় শাহীন চাকলাদার বা তার পরিবারের কোন সদস্য থানায় জিডি করেনি। ফলে অস্ত্রটি জমা দিতে পারেনি বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্যক্তিরা এখনো অস্ত্র জমা দেয়নি বলে জানা গেছে। তবে কারা অস্ত্র জমা দেয়নি তাদের নামের তালিকার কোন তথ্য দেয়নি জেলা প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-৪ এর সিনিয়র সহকারী সচিব জহিরুল হক স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় গত ২৫ আগস্ট। প্রজ্ঞাপনে লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ইস্যু করা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। এই নির্দেশনা যশোর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দপ্তর থেকে জেলার সব থানায় জারি করা হয়। থানায় অস্ত্র জমা নেওয়া শুরু হয় ২৬ আগস্ট থেকে, যার সর্বশেষ সময় ছিল ৩ সেপ্টেম্বর। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী লাইসেন্স স্থগিত করে জমা দেয়ার নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য হবে। জেলায় লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৫টি। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যশোরে জমা দেয়ার জন্য চাহিত অস্ত্রের সংখ্যা ৩৪২। যেগুলো ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ইস্যু করা। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) কার্যালয় সূত্র গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, যশোরে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রদত্ত লাইসেন্সকৃত ৩৪২টি অস্ত্রের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩০৮টি জমা পড়েছে। বাকি রয়েছে ৩৪টি আগ্নেয়াস্ত্র।
এদিকে, যশোরে এখনই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। একই সাথে তিনি কিশোর গ্যাং ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আটকের দাবি জানিয়েছেন। অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেছেন, বিভিন্ন এলাকায় ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতাদের লালিত পালিত কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিচ্ছে। ফিরে আসছে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এখনই এদের আটক না করলে তারাই নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে অন্যদের উপর দায় চাপাবে। তিনি যশোরে হোটেল জাবিরে আগুন দেয়ার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান।
যশোরের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেছেন, জমা না পড়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। তবে তিনি দাবি করেন- অস্ত্র জমা না দেয়ার মধ্যে শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। তার দুটি অস্ত্রের মধ্যে একটি জমা দিলেও অন্যটি দেয়নি। বাকি অস্ত্রটি লুট হয়েছে শুনছি। তবে তিনি থানাতে জিডি বা লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আর একজন কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া অস্ত্র জমা না দেয়ার মধ্যে বেশির ভাগ একটি বাহিনীর অবসর কর্মকর্তা।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, যারা এখনও অস্ত্র জমা দেননি, তাদের তালিকা করে বাড়ি বাড়ি যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ফোন নম্বরও বন্ধ। প্রজ্ঞাপনের পর নতুন কোনো নির্দেশনাও আসেনি। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।