বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের মণিরামপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানকালে শতাধিক শিশু ‘আকস্মিক চুলকানি’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার পৌর শহরের মণিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে আক্রান্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার স্কুলের সমাবেশের পর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু হয়। এ সময় ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল প্রিয়ার শরীরে হঠাৎ চুলকানি শুরু হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকাতে চুলকাতে ‘র্যাশ’ দেখা দেয়। তার এই অবস্থা দেখে সহপাঠী জীম এগিয়ে গিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করে চুলকানোর স্থানে হাত দিতেই তারও (জীম) শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকাতে শুরু করে এবং একই রকম উপসর্গ দেখা দেয়। এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দু’জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই বিদ্যালয়ের একই উপসর্গ নিয়ে শতাধিক শিশু হাসপাতালে আসে।
এ সময় হাসপাতালে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে গিয়েও হিমশিম খান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদার জানান, সমাবেশ শেষে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলাকালে জান্নাতুল প্রিয়া নামের ৪র্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী প্রথমে আক্রান্ত হয়। এর পরপরই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হলে প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আলাদা করা হয়।
অভিভাবক দেবাশীষ দেবনাথ বলেন, তার ছেলে দিপ্র সুস্থ শরীরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর এই রোগে আক্রান্ত হয়। তিনি আক্রান্ত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন সুমাইয়া জানান, প্রত্যেক শিক্ষার্থীই একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসে। তিনি এটিকে ‘অ্যানাফিল্যাকটিক’ প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন।
তবে, একই সাথে এত শিক্ষার্থী একই উপসর্গে আক্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক মনে করছেন না তিনি। এজন্য এই রোগটি নিয়ে তদন্ত ও গবেষণার দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না জানান, খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। এময় তিনি বিদ্যালয়ের মাঠে গরুবাহী বিপুল সংখ্যক নছিমন, আলমসাধুসহ নানা ধরনের যানবাহন দেখতে পান। শিক্ষার্থীরা ওই যানবাহনে উঠে খেলাধুলা করে। তিনি প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন রোগগ্রস্ত কোন পশুবাহী যানবাহনের সংস্পর্শ হতে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাৎক্ষণিক তিনি মাঠে যানবাহন না রাখতে নির্দেশ প্রদান করেন।
একই সাথে তিনি বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) ডা. হুমায়ুন কবীর, সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুল বাশার উমর ফারুক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদারের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।