বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বিদ্যালয়ের পথ বন্ধ করে স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে যশোর সেক্রেড হার্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শহরের গাড়িখানা সড়কে এক ঘণ্টাব্যাপি এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যশোর সেক্রেড হার্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৩ সাল থেকে বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যুগের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং চলাচলের সুন্দর রাস্তা না থাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ফলে ১৯৭৪ সালে জেলা প্রশাসকের নিকট বিষয়টি উপস্থাপন করে আবেদন জানালে সেই সময় পুরাতন কসবা মৌজার ১৪৪৪ নং দাগের সরকারি জমির কিছু অংশ যাতায়াতের জন্য রাস্তা হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের পদচারণা হচ্ছে এই রাস্তা দিয়ে। বিদ্যালয়ের যে রাস্তাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তা অতিপ্রয়োজনীয়। শিশুদের বিদ্যালয়ে আনা-নেয়ায় সুবিধা হয়। অভিভাবকরা এই রাস্তা ব্যবহারে স্বাছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু অনেক পূর্বে যে রাস্তাটি ব্যবহার করা হয়েছিল সে রাস্তাটি ছিল খুবই বিপদজনক, ঝুঁকিপূর্ণ ও পাশে সরকারি মহিলা কলেজ থাকায় ওই সময়ে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বর্তমানের রাস্তাটি দেয়া হয়। বর্তমানে এই রাস্তা ব্যতীত অন্য কোনো রাস্তা নেই। রাস্তাটি বন্ধ না করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন, নবম শ্রেণির ছাত্রী অথৈ সাহা, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী নাজিয়া খান, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইয়াসিন জামান, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার আলম, ফাইয়াজ ইসলাম সিয়াম, তহসিন হাসান দিপু, তাহমিদ আজাদ, সাবেক শিক্ষার্থী সৌভিক আহম্মেদ, প্রতিবেশী মনিরা বেগম প্রমুখ। এর আগে গত সোমবার বিদ্যালয়টির অভিভাবকবৃন্দ একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সিস্টার ভেরোনিকা যমুনা রোজারিও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ১৯৭৪ সালের ১৯ আগস্ট শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম আক্তার আলী ডিসি বাংলোর সামনের রাস্তা প্রদান করেন। সম্প্রতি বর্তমান জেলা প্রশাসক তার অফিসে ডেকে আমাদের বলেন, এই গেট বন্ধ করতে হবে।
এখানে ম্যাজিস্ট্রেট বাসভবন সম্প্রসারণ হবে। এই গেট বন্ধ হলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর যাতায়াতের ভোগান্তি হবে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টির দক্ষিণপাশে সেক্রেড হার্ট কনভেন্ট রয়েছে, যার একপাশে সিস্টারদের বাসভবন, অন্যপাশে স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রীদের হোস্টেল থাকায় এই দিকে বিদ্যালয়ের রাস্তার ব্যবস্থা করা অসম্ভব। প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এই পথ ব্যবহার অত্যন্ত কঠিন ও অনিরাপদ। আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কোন দ্বন্দ্বে জড়াতে চাই না। আমরা চাই শিশুদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসক মহোদয় তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন।’
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যালয়টির প্রধান ফটক দক্ষিণপাশে। কিন্তু সেটি শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা ব্যবহার করেন। ডিসি বাংলো’র সামনের ফটকটি অস্থায়ী। এমনকি সেটি আমাদের জমির উপরে। সেখানে আমরা ম্যাজিস্ট্রেট বাসভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। অনেক ম্যাজিস্ট্রেট এবং এডিসিরা বাইরে থাকেন; সেটা আমাদের কর্মকর্তাদের জন্য অনিরাপদ। আমরা এখনো ভবন করার পরিকল্পনা হাতে নেইনি।
শুধুমাত্র স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলেছি; ভবন করতে যতটুকু জায়গা দরকার, ততটুকু ব্যবহার করা হবে। তার আগে কিছু অভিভাবক বিষয়টি কঠিন করে ফেলে আন্দোলনে নেমেছেন।’