বাংলার ভোর প্রতিবেদক
রাতের যশোরে ফুটপাতে পিঠা-পুলির স্বাদ নিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। সাধারণের কাতারে মিশে আড্ডাও জমান তিনি। শুক্রবার রাতে কয়েকটি স্থানে ঘুরে ঘুরে তিনি যশোর শহরের রাতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। শুক্রবার রাতে সড়কের পাশে প্লাস্টিকের টুলে বসে খাবার খাওয়া ও আড্ডা দেওয়ার এমন কয়েকটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। বিশেষ কোনো প্রটোকল ছাড়াই সাধারণ বেশে শহর ঘুরে বেড়ানো এবং জনসাধারণের সঙ্গে মিশে খাবার খাওয়া বিষয়টির প্রশংসা করেছেন সবাই।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্র্বর্তী সরকারের নৌ-পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার সকালে যশোরে আসেন। এদিন তিনি বেনাপোল বন্দর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে বিকালে তিনি যশোর সার্কিট হাউজে ফিরে আসেন।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তিনি যশোর শহর ঘুরতে বের হন। প্রথমে তিনি যশোরের ঐতিহ্যবাহী কালেক্টরেট ভবন চত্বর ও পার্ক ঘুরে দেখেন। আলোকসজ্জায় রাতের কালেক্টরেট ভবনের নান্দনিকতা উপভোগ করে তিনি কালেক্টরেট ভবনের পাশে শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় আইডিয়া পিঠা পার্কের অস্থায়ী ফুড কার্ডে আসেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। এরপর আইডিয়ার ফুড কার্ডের ভ্যানে সাজানো দেশীয় বাহারি সব পিঠার সম্ভার দেখে মুগ্ধ হন। সড়কের পাশে প্লাস্টিকের টুলে বসে বিভিন্ন পিঠার স্বাদ নেওয়ার সময় তিনি শৈশবের স্মৃতি রোমান্থন করেন। দাদি-নানিদের হাতের স্পর্শের পিঠার স্বাদ আস্বাদনের স্মৃতি কাতরতা তাকে ঘিরে রাখে। এসময় তিনি স্মৃতিচারণ করেন এই শহরের নানা স্থাপনা, ব্যক্তি ও সড়ক নিয়ে।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই শহর অনেক পুরনো। অনেক স্মৃতি আমার। অনেক সড়ক এবং স্থাপনা আছে যার স্মৃতি এখনো আমাকে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তবে সময়ের সাথে সাথে এই শহরেরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে বলেও জানান। তিনি সুপরিকল্পিতভাবে শহরটাকে সুন্দর করতে স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এসময় তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক জনতাকে এই শহরে তার স্মৃতির নানা ঘটনা শোনান। এসময় তার সঙ্গে সেলফি তুলতে উৎসুক জনতার ভিড় লেগে যায়। এরপর তিনি যশোর শহরের এক প্রান্ত ধর্মতলাতে যান। সেখানে তিনি স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় গরুর দুধের চা পান করেন এবং জনসাধারণের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। রাতের যশোরের এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করে পরে তিনি সার্কিট হাউজে ফিরে যান।
এদিকে, বাড়তি নিরাপত্তার ঝক্কি দূরে রেখে সাধারণ বেশে শহর ঘুরে বেড়ানো এবং জনসাধারণের সঙ্গে মিশে খাবার খাওয়া বিষয়টির প্রশংসা করেছেন যশোরবাসী। অনেকেই উপদেষ্টার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে বলছেন, ‘রাষ্ট্রের জনগুরুত্বপূর্ণ মানুষ; সড়কের পাশে বসে খাবার খাচ্ছে। এমন পরিবর্তন তো চাই!’
আড্ডায় উপদেষ্টাকে সঙ্গ দেওয়া যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘দেশকে যারা নেতৃত্ব দেবেন, তাদের আমরা সবসময়ই গণমানুষের কাতারে আশা করি। গণমানুষের কাতারে না এলে গণমানুষের চাওয়া-পাওয়া কিংবা চাওয়া পাওয়ার অমিলকেও উপলব্ধি করা যায়না। আজ মাননীয় একজন উপদেষ্টা মহোদয় যেভাবে রাস্তার পাশে বসে পিঠা খেলেন, জনতার সাথে সাবলীলভাবে মিশলেন এটি অনুকরণীয়। নেতৃত্ব কোন ক্ষমতা নয় বরং একটি দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্ব জনতার কাতারে নেমেই পালন করতে হয়, আজ এই সত্য আরো একবার উপলব্ধি করলাম। মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’