পাইকগাছা সংবাদদাতা
পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, নেই জনবল ও সরঞ্জামাদি। এ যেন শুধু নেই আর নেই কমপ্লেক্স। আর এতসব নেই এ চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ও ব্যস্ততম পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বর্তমানে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক। এতে করে ইনডোর, আউটডোর, রাত্রীকালীন ডিউটি ও জরুরি বিভাগসহ সকল ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও এখানে ৮০ থেকে ১১০ জন রোগী সব সময় ভর্তি থাকেন এখানে। কখনো কখনো রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সিঁড়িতে থাকতে বাধ্য হন রোগীরা। জনবল বলতে গেলে ১০ শয্যার আর বেড অ্যাকুপাসি ১৫০% থেকে ১৬০%। আউটডোরে সেবা প্রার্থী থাকে কমপক্ষে ৪ শতাধিক। সাড়ে চার লাখ মানুষের পাইকগাছা উপজেলাসহ পাশের সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি ও তালা উপজেলা, খুলনার দাকোপ, চালনা থেকেও এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন অনেকে। হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), পেডিয়াট্রিক্স, ইএনটি, অর্থো, সার্জারী, কার্ডিওলজি, অফথালমোলজি, স্ক্রীন এন্ড ভিডি সহ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও শূণ্য আছে ১৭ জন। ৭ জন চিকিৎসকের ৩ জন আবার হাসপাতালে সংযুক্তিতে কর্মরত। এরই মাঝে আরো একজনের সংযুক্তির আদেশ মরার উপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মত হয়েছে।
এছাড়া, স্বাস্থ্য সহকারীর বেশিরভাগ পদ দীর্ঘদিন শূন্য। সহ আল্ট্রাসনোলজিস্ট, মালি ও ড্রাইভার না থাকায় আল্ট্রাসনো, অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পায় না জনগণ। কমপ্লেক্সের মোট কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১৯৪ জন হলেও আছেন ১০১ জন। দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য ৯৩টি পদ। এছাড়াও সার্জারি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, অপরিচ্ছন্নতা, ওয়ার্ডে পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত বাথরুম, খাবারে অনিয়ম সহ নানা সমস্যা রয়েছে হাসপাতালটিতে। দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে এক্স-রে, আল্টাসোনোগ্রাম কার্যক্রম। তেলের অভাবে ঠিকমত চলেনা জেনারেটর। গত ৫ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের অ্যাম্বুুলেন্স।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও পাইকগাছা উপজেলায় অন্তত পাঁচ লাক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি। ২০১৫ সালের ৩ মার্চ ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবার মান বাড়েনি। দেয়া হয়নি চাহিদামতো জনবল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ একজন। জুনিয়ার কনসালটেন্টের পদ ১১টি, রয়েছে ২টি। আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ ১টি শূন্য। মেডিকেল অফিসারের পদ ৭টি, রয়েছে ৩ টি। ডেন্টাল সার্জনের পদ ২টি আছে একজন। নার্সিং সুপারভাইজারের পদ একটি শূন্য। সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদ ৩২ টি, রয়েছে ২১ টি। মিডওয়াইফের পদ ৪ টি, আছে ৩ টি। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ ৭টি, রয়েছে ৩টি। ফার্মাসিস্টের পদ ২ টি। স্যাকমো পদ ২টি। স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদ ৪ পদে আছে একজন। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১৩ পদে আছেন ৮জন। কার্ডিওগ্রাফার পদ ১টি। ড্রাইভার নেই দীর্ঘদিন। স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সংখ্যা ৬৫ টি, আছে ৪৫টি। হারবাল এ্যাসিসটেন্টের পদের সংখ্যা একটি। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের পদের সংখ্যা ৪ টি, রয়েছে ২ টি। টিএলসিএ এর পদের সংখ্যা ১টি। কুক/মশালটি এর পদের সংখ্যা ২ টি, রয়েছে ১টি। অফিস সহায়ক পদের সংখ্যা ৮টি, রয়েছে ১টি। এছাড়া কম্পিউটার অপারেটর ১টি, প্রধান সহকারীর পদ একটি, হেলথ এডুকেটরের পদ ১টি, ক্যাশিয়ারের পদ ২টি, প্রধান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ ১টি, পরিসংখ্যানবিদ ১ টি, স্টোর কিপারের পদ ২টি, সহকারী নার্স ১টি, কম্পাউন্ডার ১টি, নিরাপত্তাপ্রহরী ২টি, জুনিয়র মেকানিকের পদের সংখ্যা ১টি, আয়া পদের সংখ্যা ২ টি, মালি একটি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৫টি, ওয়ার্ডবয় ৩টি পদশূন্য।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জনগণ অনেক সময় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে চলে যেতে বাধ্য হন। প্রতিদিন সকালে মাত্র দুইজন বা কখনো একজন ডাক্তার থাকায় আউটডোরে টিকিট কেটে দুই তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে ডাক্তার দেখাতে পারেন। আবার চিকিৎসা দিতে না পারায় উন্নত চিকিৎসার কথা বলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয় অনেককে।
এদিকে হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিনেও আলোর মুখ দেখেনি। প্যাথলজি বিভাগে পর্যন্ত মেশিন সরঞ্জামাদি না থাকায় পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রোগীদের যেতে হয় বাইরের ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার গড়ইখালী গ্রামের অঞ্জলী, আসমা বেগমরা জানান, জরুরি বিভাগ থেকে ডাক্তার কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছেন। সেগুলো বাইরে থেকে করিয়ে আনতে বলেন। আমরা গরিব মানুষ। টাকা দিয়ে বাইরে থেকে টেস্ট করানোর অবস্থা নেই। হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও ডাক্তার থাকলে আমাদের খুবই উপকার হতো। গদাইপুর গ্রামের মর্জিনা বলেন অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎস্যার জন্য হাসপাতালে যান। তিনি বলেন, সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালে এসেছি। সাড়ে ১০টা বাজলো। এখনও ডাক্তাররা আমার মাকে দেখেনি। আউট ডোরে টিকিট নিয়ে বসে আছি। সেবা নিতে এসে সেবা পাচ্ছি না। মারামারি ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা জানান, হাসপাতালের দেয়া খাবারের মান ভাল না।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবর রহমান জানান, তিনি অল্প ক’দিন আগে এখানে যোগদান করেছেন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানো হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট রয়েছে। অপ্রতুল সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। জরুরি ভিত্তিতে শূণ্য পদের জনবল পূরণ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হবে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অনেক পদই শূন্য রয়েছে। যে কারণে আমরা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। হাসপাতালে যে পরিমাণ রোগীর চাপ তাতে ৫০ থেকে ১০০ বেডে উন্নীত করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিবেন।