স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপনের কর্মসূচিতে ছিল ভিন্নতা। এবার আয়োজিত বিজয় মেলায় ছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস। ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, বাহারী পণ্যের প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। সোমবার সকালে শহরের টাউন হল ময়দানে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিজয় মেলা ও গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। সকালে মেলা উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। এ সমসয় জেলা প্রশাসক ও অতিথিবৃন্দ মেলার স্টল ঘুরে দেখেন।
বিজয় মেলায় ৩৫টি প্রতিষ্ঠান স্টল দেয়। স্টলে যশোরের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিক্রিও করা হয় পণ্য। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখেন মেলা চত্বর। মেলায় আসা মানুষের বিনোদনের জন্য ছিল নানা আয়োজন।
মেলায় গ্রামীণ খেলাধুলার মধ্যে ছিলো লাঠি খেলা, কাবাড়ি, দাঁড়িয়াবাঁধা, সূচে সুতা পরানো, কলা গাছে উঠার প্রতিযোগিতা, হাঁস ধরা প্রভৃতি। গ্রামীণ খেলাধুলার মধ্যে দর্শকদের নজর কাড়ে লাঠি খেলা। নড়াইল জেলা থেকে আসা লাঠি খেলার একটা দল দীর্ঘ সময় লাঠির কলাকৌশলে দর্শকদের মোহিত করে। উৎসুক দর্শক সারিতে দাঁড়িয়ে খেলা উপভোগ করেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদসহ কর্মকর্তাবৃন্দ। ছেলে মেয়ে ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত টিমের লাঠি খেলা দেখতে ভিড় করে সকল বয়সের মানুষ। এ সময় দর্শকের করতালিতে খেলোয়াড়দের বাড়তি উৎসাহ জোগায়। লাঠি খেলা শেষে টাউন হল মাঠের পুকুরে হাঁস ধরা খেলাটাও উপভোগ করেন দর্শকরা। পুকুর ভরা পানিতে সাঁতার কেটে, ডুব দিয়ে হাঁস ধরার চেষ্টা করে খেলায় অংশ নেওয়া একদল কিশোর। হাঁসের আত্মরক্ষার সাথে সাথে ভরা পুকুরে কিশোরদের হাঁস ধরার প্রবল ইচ্ছা উপস্থিত দর্শকদের মনকে আন্দোলিত করে।
এ বছর বিজয় দিবসের এমন ব্যতিক্রম আয়োজন শহরের ইট পাথরের জীবনে অভ্যস্থ মানুষের পুরানো দিনের স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। ক্ষণিকের জন্য হলেও মধ্যবয়স্ক মানুষদের স্মৃতিপটে ভেসে উঠে বাঙ্গালি জাতির বহু বছর ধরে বহমান সাংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ গ্রামীণ খেলাধুলা। নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয় হারাতে বসা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাবাডি ও লাঠিখেলার সাথে।
বিজয় দিবসে শহরের টাউন হল মাঠে গ্রামীণ লাঠি খেলা দেখতে আসা শংকরপুর এলাকার মধ্যবয়স্ক আতিয়ার রহমান বলেন, আমরা ছোটবেলায় লাঠি খেলা, হাড়িভাঙ্গা, দাঁড়িয়াবাঁধাসহ অনেক খেলাধুলা করতাম। গ্রামের মাঠে ফসল তোলার পর ফাঁকা মাঠে বিকেল বেলা গ্রামের ছোট বড়রা মিলে এইসব খেলাধুলা চলত। এখনকার ছেলেমেয়েরা এই সব খেলার সাথে পরিচিত না। অনেক দিন পর এমন গ্রামীণ খেলাধুলা দেখতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি।
সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষার্থী ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমরা নতুন প্রজন্ম আমাদের গ্রাম বাংলার অনেক বিখ্যাত খেলার সাথে পরিচিত না। এমন আয়োজন আমাদেরকে আমাদের সাংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটাতে সক্ষম হবে।