বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের ঝিকরগাছায় পাঁচ বছর আগে ‘গণপিটুনিতে চোর’ হত্যার ঘটনায় ৩শ’ থেকে ৩৫০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। মামলায় আসামিদের নাম উল্লেখ না থাকায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫জন গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
বাকি একজন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। মামলায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে চার্জশীট না দেওয়ায় তিন গ্রামের সাধারণ মানুষ আতংকে রয়েছে। দ্রুত মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়। মঙ্গলবার প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ঝিকরগাছা উপজেলার মির্জাপুর, দোস্তপুর ও চন্দ্রপুর গ্রামবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা ইমাম হোসাইন বলেন, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ঝিকরগাছা উপজেলার মির্জাপুর, দোস্তপুর ও চন্দ্রপুর গ্রামে ১৬টির অধিক গরু, ১২টি ছাগল, সাইকেল, মোবাইল, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার, স্যালোমেশিন, টিউবওয়েল, সেচপাম্পসহ বিভিন্ন দোকানপাট চুরি হতে থাকে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে গ্রামে নিরাপত্তা কমিটি গঠন করে পাহারা দিতে থাকি। ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটের দিকে চোরাই তিনটি গরুসহ ঝিকরগাছার মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন ও আবদুলকে হাতেনাতে ধরে ফেলি। এসময় গণধোলাই খেয়ে ইলিয়াস ও আবদুল অসুস্থ হয়ে পড়ে। এলাকাবাসী গরুসহ দুই চোরকে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইলিয়াস হোসেন মারা যান।
এ ঘটনায় ওই বছরের ২৩ জানুয়ারি গ্রাম পুলিশ আকরাম হোসেন বাদি হয়ে ঝিকরগাছা থানায় ৩শ’ থেকে ৩৫০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
পরবর্তীতে মামলার ভয়ে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাদীপক্ষকে নিয়ে মীমাংস মিটিং করে। গ্রামবাসীর কাছ থেকে স্থানীয় মেম্বর আবদুস সালামের নেতৃত্বে ছয় লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়। নিহত ইলিয়াস ও আহত আবদুল হকের পরিবারকে ৬ লাখ টাকা দেয়া হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক কারণে বাদি মামলা প্রত্যাহার করেনি। এই মামলায় ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই চন্দ্রপুর গ্রামের আবদুল করিমকে গ্রেফতার করে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর পুলিশের ভয়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টি হয়। পুলিশের স্থানীয় সোর্সরা বিভিন্নভাবে পুলিশ গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতে থাকে। প্রথম গ্রেফতার আবদুল করিম ১৪ মাস পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। তার জামিন পেতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। গ্রামের মানুষ গ্রেফতার আতংকে রাতে বাড়িতে থাকতে পারছে না। দ্রুত মামলাটির চার্জশিট প্রদান ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি বন্ধের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, নিহত ইলিয়াসের মায়ের দায়েরকৃত সিআর মামলাটি আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করছে। সুনির্দিষ্টি প্রমাণের ভিত্তিতে প্রথমে একজন গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে পরে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলায় এই পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাউকে হয়রানি করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। দ্রুত মামলাটির চার্জশিট দেয়ার চেষ্টা করা হবে।