বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সপ্তাহে ছুটির দিন বাদে প্রতিদিনই খোলা আকাশের নিচে যশোর রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের পাশে চলে বিশেষ স্কুল শুদ্ধাঙ্গন। প্রতিদিন বই খাতা হাতে কিংবা স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে শিশুরা আসে। তবে মঙ্গলবার বিকেলে ছিল ভিন্ন চিত্র। এদিন শিক্ষার্থীদের কাছে ছিল না স্কুলব্যাগ কিংবা বই খাতা। সবাই রঙিন সাজে অভিভাবকদের হাত ধরে স্কুলে এসেছে পিঠা উৎসবে। তাদের সাথে ছিল যার যার সাধ্যমতো তৈরি করা বাহারী স্বাদ আর নামের হরেক রকমের পিঠা। ধনী-গরীব, ধর্ম-বর্ণের গণ্ডি পেরিয়ে ক্ষণিকের জন্য আয়োজনটি রূপ নেয় আনন্দ উৎসবের। বিশেষ এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে সেবামূলক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধাঙ্গন।
নকশি পিঠা, চিতই পিঠা, রস পিঠা, ডিম চিতই, দোল পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান, আন্দশা, কাটা পিঠা, ছিটা পিঠা, গোকুল পিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, পাতা পিঠা, ঝুড়ি পিঠাসহ আরও কত নাম! সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্টেশনের দ্বিতীয় প্লাটফর্মের পশ্চিমাংশে পিঠাপুলির উৎসবে শুদ্ধাঙ্গনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের নিয়ে আয়োজন মিলনমেলায় পরিণত হয়। স্টেশনে অপেক্ষমান এবং আগত যাত্রীদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল আয়োজনের বাড়তি পাওনা।
ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য প্লাটফর্মে অপেক্ষমান শাহেদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। ছুটি না পাওয়ায় গ্রামে যাওয়া হয়নি তাই পছন্দের পিঠাও এবার তার খাওয়া হয়নি। তবে শুদ্ধাঙ্গনের এ আয়োজন দূর থেকে দেখে কাছে এসে তিনি তার পছন্দের পিঠা টি পেয়েছেন। এ বছরের মতো প্রথম খেয়েছেন। যা তার মনকে অনেক ভালো করে দিয়েছে।
শুধু শাহেদুর রহমান নয় এমন অনুভূতি ছিল আরও অনেকের শুদ্ধাঙ্গনের শিক্ষার্থী আলিফের মা তানজিলা, হাবিবা ইসলাম রুপার মা হাসি বেগম, পাপ্পুর মা রাবেয়া বেগম জানান এটি তাদের জীবনেরও একটি স্মরণীয় দিন। এর আগে এমন আয়োজনে তারা কখনো অংশ নেননি। পিঠা উৎসবে অংশ নিতে তাদের সন্তানদের মধ্যে ছিল বিশেষ আগ্রহ সেই সাথে তাদের প্রস্তুতিও ছিল। এ আয়োজন তাদের অনেক সমস্যার মধ্যে একটু হলেও মনে আনেন্দের খোরাক হয়েছে বলে মনে করেন তারা। শুদ্ধাঙ্গনের শিক্ষার্থী হাসানুর, রুকাইয়া, আবু সালমানসহ অন্যরা জানায় জীবনে প্রথম তারা পিঠা উৎসবে অংশ নিয়েছে। একসাথে এত পিঠাও তারা এর আগে কখনো দেখেনি।
উৎসব সফল করতে আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রেসক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক বাংলার ভোরের সম্পাদক সৈয়দ আবুল কালাম শামছুদ্দীন জ্যোতি। উপস্থিত ছিলেন শুদ্ধাঙ্গনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৌমিত্র রায় সেতু, শুভাকাঙ্খি সালমা খাতুন মনি, শরিফুল ইসলামসহ অন্যরা। এ ছাড়াও স্টেশনে দূর দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থী অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
শুদ্ধাঙ্গনের পরিচালক তন্ময় মন্ডল জানান, শীতের পিঠা আমাদের ঐতিহ্য। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা নানা রকম পিঠার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের মুখে একটু হাসি ফোটানো এবং পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ববোধ শিশুদের মনে জাগাতে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন।
তিনি বলেন, সমাজের হতদরিদ্র পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্ব-শিক্ষিত করে তোলা এবং তাদের শিক্ষার পথ সুগত করা তাদের মূল উদ্দেশ্য। তবে এ শিশুরা যাতে নিজস্ব সংস্কৃতি ঐতিহ্যের সমন্বয়ে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে জীবনের প্রথমার্ধে তাদের সে শিক্ষাও দিতে চায় শুদ্ধাঙ্গন।
আপাতত ৩০ জন শিক্ষার্থী তাদের কাছে রেজিস্ট্রেশনকৃত আছে উল্লেখ করে তন্ময় আরও বলেন, এ পিঠা উৎসব শুধু শিশুদের আনন্দ দানের জন্য নয়, তাদের অভিভাবকদেরও জন্যও আয়োজন করা। আমরা চাই সকলকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে।