# উপজেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তি জারি
# দুটি ফুল বিপণন কেন্দ্রে বেচাকেনার নির্দেশ
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘ফুলের রাজধানী’ খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকার মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ফুল বেচাকেনা বন্ধ ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রশাসন। ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুপালী সরকার স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিটি সোমবার দুপুরে প্রকাশ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে জনস্বার্থে এই বিজ্ঞপ্তি কার্যকর করার কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘গদখালী ফুল ব্যবসায়ী ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত সর্বসাধারণকে জানানো যাচ্ছে যে মঙ্গলবার (১৩ মে) থেকে গদখালীতে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুপাশে রাস্তা থেকে ১০ মিটার সীমানার মধ্যে ফুলসহ যেকোনো ধরনের বিপণন কার্যক্রম ও জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। ওই সড়কের দুই পাশে ঝুঁকিপূর্ণ মৃত রেইনট্রিগাছ রয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে ঢাকা-খুলনা-যশোর যোগাযোগ স্থাপনকারী ভিষণ ব্যস্ততম মহাসড়ক হওয়ায় রাস্তার ওপরে জনসমাগম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ওই রাস্তার পাশে এবং মৃত রেইনট্রিগাছের নিচে ফুল ব্যবসায়ীদের সমাগম বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা বলে মনে করে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যশোর। এই শঙ্কার কথা চিন্তা করে সরকার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে গদখালী ও পানিসারায় সরকারি খরচে স্থাপন করেছে দুটি ফুল বিপণনকেন্দ্র। ফুল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সর্বসাধারণকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্মিত ফুল বিপণনকেন্দ্র ও এর সন্নিকটে ফুল ব্যবসা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলো। এই আদেশ অমান্য করলে গদখালীতে ফুল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সব ধরনের সমিতিকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা জানান, ‘চাষি ও ব্যবসায়ীদের ফুল বেচাকেনার নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পানিসারা ও গদখালী এলাকায় পৃথক দুটি বিপণনকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে কেন্দ্র দুটি চালু করা যায়নি। দুই মাস ধরে চেষ্টার ফলে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আশা করছি গদখালীর কেন্দ্রটি কাল থেকে চালু করা যাবে। ওই কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য সড়কটি আরসিসি ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। যোগাযোগ সমস্যা আর থাকবে না। কৃষকের টোল খরচও কম হবে। কারণ, গদখালী বাজারের ইজারামূল্য ৬ লাখ টাকা; সেখানে বিপণনকেন্দ্রের টোল খরচ মাত্র ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ফলে এই কেন্দ্র থেকে চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে আশা করছি।’
প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ওপরে গদখালী বাজারে ফুল বেচাকেনার হাট বসে। এতে অত্যন্ত ব্যস্ততম এই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য ফুলের বাজারটি সরিয়ে নেয়ার জন্য চার বছর আগে ১ কোটি ৭ লাখ টাকায় পাশেই ফুল বিপণনকেন্দ্র স্থাপন করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু কেন্দ্রে প্রবেশের সড়কটি কাঁচা ছিল। একটি অংশ সরু রয়েছে। যে কারণে কৃষকেরা এত দিন ওই কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হননি।
এদিকে, ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নে তিন বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাংলাদেশ-আমেরিকা সৌহার্দ্য ফুল বিপণনকেন্দ্রটি। এই কেন্দ্রে বিজ বিপণন ও সংরক্ষণের জন্য হিমাগার, ফুল মোড়কজাত (প্যাকেজিং) ও বিক্রির জন্য পাকা মেঝে এবং টিনের ছোট ছোট ছাউনি (শেড) রয়েছে। মার্কেটটির সামনের সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মাঠ থেকে ফুল নিয়ে শত শত কৃষক বিক্রি করতে যান সাড়ে ৩ কিলোমিটার দূরে গদখালী বাজারে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে সাড়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে হিমাগারসহ আধুনিক ফুল মার্কেট নির্মাণ করে সরকার। ১ একর জমিতে এই বিপণনকেন্দ্র নির্মাণের পর ২০২২ সালে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু মার্কেট নিয়ে ফুলচাষিদের কোনো আগ্রহ না থাকায় তিন বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘সরকার যে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, এটাকে সাধুবাদ জানাই। যে কৃষকদের জন্য আমরা চেষ্টা-তাগাদা দিয়ে দুটি আধুনিক বিপণনকেন্দ্র নির্মাণ করেছি, স্থানীয় দলাদলিসহ নানা সমস্যার কারণে তা চালু করা যায়নি। এবার সরকারি উদ্যোগে গদখালী বিপণনকেন্দ্রটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু পানিসারার কেন্দ্রটি চালু হচ্ছে না রাজনৈতিক কারণে। চাষিদের হুমকি দিয়ে এই কেন্দ্রে ফুল আনতে দেয়া হয় না। রাজনৈতিকভাবে এর সমাধান করতে হবে। কেন্দ্রটি চালু করতে পারলে হাজার হাজার ফুলচাষি লাভবান হবেন।’