# সংশোধনের এখতিয়ার বর্তমান পরিষদের নেই দাবি সাধারণ সদস্যদের
# সদস্যদের অনুরোধ বা চাপে সংশোধনের উদ্যোগ : সাধারণ সম্পাদক
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
‘একটানা দুইবারের বেশি পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে না’। এমন বিধিনিষেধ বদলের উদ্দেশ্যে যশোর ইনস্টিটিউটের গঠনতন্ত্র বদলের তোড়জোড় চলছে। এ ছাড়াও ইচ্ছেমাফিক পছন্দের ব্যক্তিদের সদস্য করে ‘ভোটব্যাংক’ গড়া। ঘুরেফিরে ভোট ব্যাংকের মালিক একই ব্যক্তিদের বারবার নির্বাচিত হওয়া রোধ। বার্ষিক সাধারণ সভার কোরাম পূরণ না হওয়াসহ আরো বেশ কতগুলো জটিলতা নিরসনে আনা বিগত দিনের সংশোধনীও বদলের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান পরিষদ। যার অংশ হিসেবে হঠাৎ করে আহ্বান করা হয়েছে বিশেষ এক বার্ষিক সাধারণ সভার।
কয়েকটি অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে ২০১৭ সালে সংশোধন করা হয়েছিল ইনস্টিটিউটের গঠনতন্ত্র। শিক্ষা-সংস্কৃতি-ক্রীড়াসহ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়া প্রতিষ্ঠানটিতে গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল ফেরাতে নেয়া হয়েছিল এমন উদ্যোগ। আর অর্ধযুগেরও বেশি সময় সেই সংশোধনীর আলোকে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার পর হঠাৎ করে সেসব সংশোধন বাতিলের তৎপরতায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। সংবিধান বা গঠনতন্ত্রে সংশোধন আনতে আজ শনিবার সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। বি. সরকার মেমোরিয়াল হলে এদিন বিকেল সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিত হবে সভাটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে নিজেদের পছন্দের লোকেদের প্রতিষ্ঠানের সদস্য বানিয়ে ভোট ব্যাংক সৃষ্টি। পুনরায় পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরির জন্য বিশেষ এই সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিগত সময়ের সংশোধনীর কারণে কোনো প্রার্থীর পর পর দুইবারের বেশি পরিচালনা পর্ষদে নির্বাচন করার সুযোগ না থাকায় সেটিতে বদল আনতে এই সভা ডাকা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের ঊনত্রিশ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে বার্ষিক সাধারণ সভার নিয়ম থাকলেও এ বছর সেটি করা হয়নি। কেবল গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনতে বিশেষ সভা আহ্বান করা হয়েছে।
গঠনতন্ত্রের সংশোধন বদলাতেই যে এই বিশেষ সভার আয়োজন; সেটি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিশেষ সাধারণ সভার নোটিশেও স্পষ্ট হয়েছে। নোটিশে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইনস্টিটিউটের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫, ৬, ৪১ ও ৫২ সংশোধন প্রসঙ্গ আলোচ্য সূচিতে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, যশোর ইনস্টিটিউট কব্জায় রাখতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতাদর্শের লোকজনকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন পদে আসীন করতে তৎপর থাকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠগুলোও এ তৎপরতার বাইরে নেই। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে থাকাটা মর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় যশোরের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও ইনস্টিটিউটের নির্বাচনে অংশগ্রহণে সবসময় মুখিয়ে থাকেন। ফলে প্রতিষ্ঠানটির আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেয়ে পদ পাওয়া ও ধরে রাখা ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে ‘ইনস্টিটিউট এক ধরনের চর দখলের রাজনীতি’ চলে আসছে। আর এই রাজনীতিতে বিজয়ী হতে ও ইনস্টিউটটে চেয়ার আঁকড়ে ধরে রাখতে চলে ‘ভোট ব্যাংক’ পলিসি।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে একাধারে পর ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদে আসীন ব্যক্তিরা পকেটের টাকা খরচ করে নিজেদের পছন্দের লোকেদের সদস্য করেন। এমনও প্রচার আছে অনেকে নিজেকে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজন ছাড়াও বাড়ির গৃহকর্মী, ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সদস্য করেছেন। কখনো ইনস্টিটিউটে যাতায়াত নেই; শিল্প-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া চর্চায় কোনো অংশগ্রহণ ও এসবের বিকাশের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের তৎপরতায় যুক্ত নেই; তাদেরও প্রচুর সংখ্যায় সদস্য করা হয়েছে। ভোট ব্যাংক গড়তে এই চর্চা চলে আসছে দীর্ঘদিন। এসব সদস্যদের চাঁদাও পরিশোধ করেন ভোট ব্যাংকের মালিকেরা। ফলে ইনস্টিটিউট গঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সম্পৃক্ত না; এমন ব্যক্তিদের সদস্য করায় বার্ষিক সাধারণ সভার কোরাম পূরণে হয় না বছরের পর বছর।
এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংশোধীনের মাধ্যমে গঠনতন্ত্রের ৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়। এক্ষেত্রে বাছবিচারহীন সদস্য করা বন্ধে সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইএসসি বা সমমানের করা হয়। এদিকে, ভোট ব্যাংকের মালিকদের বারবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ রোধে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি সংযোজন করা হয়। এক্ষেত্রে ৪১ অনুচ্ছেদে নতুন করে যুক্ত করা হয় পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অংশ নিতে হলে কমপক্ষে এইচএসসি বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। এ ছাড়াও এই ধারায় সংযোজন করা হয় কোনো প্রার্থী পরপর দুইবারের বেশি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। একবার বিরতি দিয়ে আবারো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
এদিকে, সদস্যপদ সংক্রান্ত ৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ৩০ টাকায় করার পর ‘ভোট ব্যাংক’ মালিকদের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সেটি বদলেও তৎপরতা চলছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে ভোটের স্বার্থে যাদের সদস্য বানানো হয়েছে তাদের চাঁদা পরিশোধের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে। আগে যখন মাসিক সদস্য চাঁদা ১০ টাকা ছিল তখন ভোটের আগে তিন বছরের চাঁদা ৩৬০ টাকা দিয়ে পার পেয়ে যেতেন ভোট ব্যাংক মালিকেরা। এখন সেটি তিনগুণ হয়ে যাওয়ায় ‘ভোট ব্যাংক’ রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে। যার কারণে এই অনুচ্ছেদের সংশোধন বা বদলের চেষ্টা চলছে।
সংবিধান সংশোধনের নোটিশের ব্যাপারে ইনস্টিটিউটের সদস্যদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এই সংশোধনী নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সদস্য হাফিজুর রহমান বাবলু বলেন, বর্তমান কমিটি নির্বাচিত না। বিনা ভোটে এই কমিটি গঠন হয়েছে। চাপ প্রয়োগ করে গতবার নির্বাচনের সময় অন্য প্যানেলের কাউকে প্রার্থী হতে দেয়া হয়নি। সুতরাং একটি অনির্বাচিত পর্ষদ এ ধরনের মিটিং ডাকতে পারে না। সংবিধান (গঠনতন্ত্র) সংশোধনের এখতিয়ারও তাদের নেই।
ইনস্টিটিউটের জীবন সদস্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ জানান, সংবিধান সংশোধনের নোটিশ যেভাবে দেয়া হয়েছে সেটি যথাযথ না। সংবিধানের যে ধারায় বদল আনা হবে সেটি উল্লেখ করতে হয়। কী কী সংশোধন বা রদ-বদল করা হবে সেটি উল্লেখ করা হয়নি নোটিশে। অনেকের কাছে তো সংবিধান-ই নেই। তাহলে তারা কীভাবে বুঝবে যে, কী এবং কোন বিষয়ে সংশোধন আনতে চাওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু বলেন, ‘অধিকাংশ সদস্য আমাদের কাছে এসে তারা বলছে, সংবিধান যে সংশোধন হয়েছিলো; সেটা সঠিকভাবে হয়নি। তখনকার সরকারের সময়ে হয়েছিলো। তারা এখন বাতিল করার দাবি জানিয়েছে। দাবি উঠেছে নতুন করে সংবিধান সংশোধন করার। সদস্যদের অনুরোধ বা চাপে আমরা এই সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছি।’