বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন বেজপাড়া তালতলা বস্তির বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৪৫)। দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ আয় হয়েছে দেড়শ’ টাকারও কম। মহাজনকে দিতে হবে দুইশ’ টাকা। কিন্তু, রাস্তায় লোকজনের চলাচল খুবই কম। রোববার দুপুর থেকে থেমে থেমে নামে মুষলধারে বৃষ্টি নামে যশোরে। সোমবার ভোররাত থেকেই একইভাবে ঝরেছে বৃষ্টি। তবে, রোববারের চেয়ে সোমবার দিনভর ঝরেছে অঝর ধারায়। দুইদিনের ভারি বৃষ্টিতে যশোরের নিম্নাঞ্চলের রাস্তা, বাড়ি-ঘর ও ফসলের মাঠে পানি জমে গেছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনমজুর শ্রেণির মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনে যশোরে ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার ৬৭ মিলিমিটির এবং সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮৪ মিলিমিটার। সোমবার আবহাওয়া অফিস এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, এদিন বিকেল ৩টায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল এলাকায় সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে (২৩.০ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৬ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
নিম্নচাপের ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম বলেন, বর্ষাকালে যখন কোনো লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, এর প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। তাপমাত্রা কমে যায়, গরম কমে যায়। এই মাসে এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে। শুধু ফেনী জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ’।
দুইদিনের বৃষ্টিতে যশোর শহরের দক্ষিণ অংশের রাস্তায় পানি জমেছে। এর মধ্যে খড়কি, শংকরপুর, মিশনপাড়া, বেজপাড়া, চাঁচড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়ি-ঘরেও বৃষ্টির পানি জমে গেছে। রাস্তায় বিটুমিনের আস্তরণ উঠে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চলাচলে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল ইসলাম, বলেন, ‘পৌরসভার কর্মীরা পানি সরানোর কাজ করছে। যেখানে যেখানে পানি জমার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে পানি জমার কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে ভাঙা রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হবে’।
এদিকে, দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতে মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। নিম্ন আয়ের মানুষের রোজগার কমেছে। সদর উপজেলার কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের ইজিবাইকের একজন চালক বলেন, ‘শহরে মানুষের চলাচল কমে গেছে। অন্যদিনের তুলনায় গত দুইদিনে আয় কমে গেছে’।
এদিকে, জলাবদ্ধতার প্রভাব পড়েছে বাজারঘাটেও। শহরের প্রধান কাঁচাবাজারগুলোতে অনেক ব্যবসায়ী দোকান খোলেননি, যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। এছাড়াও, রিকশা ও অটোচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন এবং অনেক রাস্তায় পানি জমে থাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষিক্ষেত্রেও বৃষ্টির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
যশোর সদরের চুড়ামনকাটি, বারীনগরসহ মণিরামপুর ও ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন মাঠে সবজি ক্ষেতে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানি না সরলে এবং নতুন করে সবজি চাষ সম্ভব না হলে বাজারে সবজির দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ ক্রেতারা। সব মিলিয়ে, টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় যশোরের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ।