বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের ফিজিওথেরাপী দেয়াকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় দুটি ফিজিওথেরাপি সেন্টারের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা নাগাদ মেঘনা ফিজিওথেরাপী সেন্টার ও শাহজালাল ফিজিও থেরাপী সেন্টারে কর্মরতদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনায় মেঘনা ফিজিওথেরাপি স্টোরের মালিক গোলাম রসুল (৩৩) কোতোয়ালি মডেল থানায় শাহজালাল ফিজিও থেরাপী সেন্টারের মালিক আব্দুল্লাহ আল আমিন বাচ্চু (৪৫) এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে গোলাম রসুল উল্লেখ করেছেন যে, শাহজালাল ফিজিওথেরাপী সেন্টারের মালিক বাচ্চু ও তার স্ত্রীসহ অজ্ঞাত ৩ থেকে ৪ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকদের সাথে গোলাম রসুলের দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক বিরোধ চলে আসছিল। গোলাম রসুলের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মিথীলা (১৮) ও চম্পা (১৯) সদর হাসপাতালে থেরাপী ও অন্যান্য কাজে গেলে পূর্ব শত্রুতার জেরে বাচ্চু ও তার সহযোগীরা তাদেরকে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ, মারধর এবং আটকে রাখে। খবর পেয়ে গোলাম রসুল দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও গালিগালাজ করা হয় এবং মারতে উদ্যত হয়। ঘটনার পর থেকে বিবাদীরা তাকে ফোনে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় শাহজালাল ফিজিওথেরাপী সেন্টার-এর মালিক আব্দুল্লাহ আল আমিন বাচ্চু ও থানায় পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে ফিজিওথেরাপী সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই চক্রটি স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সাধারণ রোগীদের জিম্মি করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে হাসপাতাল প্রশাসনও তাদের দমনে হিমশিম খাচ্ছে। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, ফিজিওথেরাপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দিতে।
উল্লেখ্য, শাহ্ জালাল ফিজিওথেরাপী সেন্টার, সেবা ফিজিওথেরাপী সেন্টার, সোনালী ফিজিওথেরাপী সেন্টার, নাজনীন ফিজিওথেরাপী সেন্টার এবং মেঘনা ফিজিওথেরাপী সেন্টারের কর্মচারীরা হাসপাতালের ভেতরে সক্রিয় রয়েছে।
তাদের কর্মচারীরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে রোগীদের ফিজিওথেরাপি দিয়ে থাকে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এই কর্মচারীদের অধিকাংশেরই ফিজিওথেরাপি বিদ্যায় কোনো দক্ষতা নেই। সাধারণ রোগীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এই চক্র কৌশলে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। রোগী প্রতি ৩০০ টাকা করে খরচ নেয়া এই চক্রে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন সদস্য রয়েছে। প্রায়ই এই চক্র নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়। সেই বিবাদ মারামারির পর্যায়েও চলে যায়। সম্প্রতি সিণ্ডিকেটের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে।
শাহজালাল ফিজিওথেরাপী সেন্টারের মালিক আব্দুল্লাহ আল আমিন বাচ্চু বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে আমার স্ত্রী কাজ করছে। আমার একজন নারী কর্মচারীকে মারপিট করা হয়েছে। সে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবারের মারামারির ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও যশোর জেনারেল হাসপাতালে ফিজিওথেরাপী সিন্ডিকেটের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। দাবি উঠেছে এই সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরে সাধারণ রোগীদের হয়রানি বন্ধে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপের।
হাসপাতালের তত্ত¦াবধায়ক ডা. হুসাইন সাফায়াত বলেন, হাসপাতালে দালাল ও ফিজিওথেরাপী চক্রের সদস্যদের কারণে আমরা একেবারে অতিষ্ঠ। পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি ফিজিওথেরাপির লোক ঢোকা একেবারে বন্ধ করে দিতে।