বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের মণিরামপুরে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদী খুঁড়ে বালু তুলে কলেজ মাঠ ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। টিআর প্রকল্পের ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে মাটির পরিবর্তে নদী থেকে বালু তুলে উপজেলার মুক্তেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ মাঠ ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। কলেজের পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নদী খুঁড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কলেজ মাঠ ভরাটের কাজ চলছে বলে অভিযোগ। নদী খুঁড়ে বালু উত্তোলন নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ইউএনওর তত্ত্বাবধানে এই অবৈধকাজ চলমান থাকায় ভয়ে তারা এই বিষয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।
স্থানীয়রা বলছেন, যেখানে নদী থেকে বালু তোলা বন্ধ করা ইউএনওর কাজ। সেখানে ইউএনও নিজেই রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা নিয়ে নদী খুঁড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবদহের অঞ্চলভুক্ত হওয়ায় উপজেলার পাঁচবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত মুক্তেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ মাঠ বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার শিকার হয়। জলাবদ্ধতার কারণে কলেজ মাঠ পানিতে ডুবে শ্রেণিকক্ষে পানি জমে থাকে। ফলে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হয়। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের আওতায় মুক্তেশ্বরী কলেজ মাঠে মাটি ভরাটের জন্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর। সেই টাকা দিয়ে মাটি না কিনে মুক্তেশ্বরী নদী খনন করে বালু তুলে কলেজ মাঠে ফেলা হয়েছে। বরাদ্দের টাকায় ঘাটতি পড়ায় কলেজ ফান্ড থেকে বালু তোলার কাজে আরও দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইউএনও নিশাত তামান্না।
শুক্রবার সকালে সরেজমিন পাঁচবাড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মুক্তেশ্বরী কলেজের অদূরে উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মুক্তেশ্বরী নদী। কলেজ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পাঁচবাড়িয়া শ্মশানঘাটে মুক্তেশ্বরী নদীতে ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে। সেখান থেকে পাকা রাস্তার পাশ দিয়ে পাইপ টেনে এনে মনিরামপুর-নওয়াপাড়া সড়ক টপকে ফেলা হয়েছে মুক্তেশ্বরী কলেজ মাঠে। নদী খুঁড়ে বালু তুলে সেই বালু এই পাইপের ভিতর দিয়ে এনে ফেলা হচ্ছে কলেজ মাঠে। কলেজমাঠে বালু ছড়ানোর জন্য একটি স্কেভেটর যন্ত্র রাখা আছে। তবে এসময় বালু উত্তোলন চক্রের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তেশ্বরী নদীর বালু এনে মাঠের কোথাও দুই ফুট আবার কোথাও পাঁচ ফুট উঁচু করা হয়েছে। মাঠের ২৬ হাজার ৪০০ বর্গফুট জায়গায় প্রায় ৬৬ হাজার বর্গফুট বালু ফেলা হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রমেন মণ্ডল বলেন, ইউএনও স্যার আমাদের সভাপতি। মাঠ ভরাটের জন্য সরকারিভাবে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। সেই টাকা দিয়ে বালু তোলা যন্ত্র ও লোক ভাড়া করে এনে মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু তুলে মাঠ ভরাটের কাজ করেছি। ওই টাকায় কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় পরে ইউএনও স্যার কলেজ ফান্ড থেকে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেন, ২২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ও ১২০ ফুট প্রস্থের কলেজ মাঠে দুই ফুট আবার স্তর ভেদে পাঁচ ফুট বালু তোলা হয়েছে। কলেজ থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে নদীতে যন্ত্র বসিয়ে বালু তুলতে হওয়ায় খরচ একটু বেশি হয়েছে। প্রতিফুট বালুর জন্য সাড়ে সাত টাকা খরচ দিতে হয়েছে। সভাপতি হিসেবে ইউএনও স্যার বিষয়টি তদারকি করছেন। স্যারের সহযোগিতা না পেলে কাজটা এত সুন্দরভাবে করতে পারতাম না।
স্থানীয়দের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাঁচবাড়িয়া এলাকার এক ব্যক্তি ঘের কেটে কলেজ মাঠে মাটি দিতে চেয়েছেন। ঘের কাটার শর্তে কলেজের পক্ষ থেকে জমির মালিক কোন টাকা চাননি। শুধুমাত্র মাটি কাটা খরচের বিনিময়ে তিনি কলেজে মাটি দিতে চেয়েছেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়নি। নদী থেকে বালু তুলে কলেজ মাঠে দিচ্ছে। ইউএনও নিজে এসে বালু তোলার কাজ দেখে গেছেন।
এদিকে, মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন করে মুক্তেশ্বরী কলেজ মাঠ ভরাটের বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সভাপতি দুজনে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রমেন মণ্ডল ইউএনওর পরামর্শে মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু তুলে কলেজ মাঠ ভরাটের কথা জানালেও কলেজের সভাপতি ইউএনও নিশাত তামান্না বালু কিনে এনে কলেজ মাঠ ভরাটের কথা বলছেন। মুক্তেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের সভাপতি ইউএনও নিশাত তামান্না বলেন, বালু কিনে এনে কলেজ মাঠ ভরাটের কাজ করা হয়েছে। মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হয়নি। কারণ নদী থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।