কাজী নূর
পতিত প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেছেন, শয়তানের প্রথম পছন্দের কাজ হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে দেয়া।
বিগত শাসনামলে তারা মানুষের উপর জুলুম করেছে। সে সময় তারা জালিমের ভূমিকায় ছিল, আর এখন শয়তানের ভূমিকায় আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা ঘাপটি মেরে রয়েছে। তারা সুযোগ পেলেই আঘাত হানবে, বিভাজন সৃষ্টি করবে, আমাদের ঐক্য নষ্ট করবে। সুতরাং এই শয়তানের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। দেশের জন্য যেকোন মূল্যে আমাদের ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
রোববার বিকেল ৪টায় যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জুলাই বিপ্লবের ১ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে “জুলাই বিপ্লব তারুণ্যের ভাবনা ও বাংলাদেশ” শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল হাশিম রেজা।
শেখ হাসিনার অভিনয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, তিনি যে কত রকমের অভিনয় জানেন তা চিন্তাতেও আসে না। দিনের বেলায় হাসপাতালে জুলাই আহতদের দেখতে গিয়ে চোখের পানি মুছেছেন। আবার রাতের অন্ধকারে নির্দেশনা দিয়েছেন তাদেরকে যেন চিকিৎসা না দেয়া হয়। জুলাই আহতদের সঠিক সময়, সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে হয়ত নিহতের সংখ্যা এতটা বাড়তো না।
তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, হয়তো এমন অনেক শহীদের সংখ্যা আছে, যা আমরা জানি না। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টের দোসররা জুডিশিয়াল ক্যুসহ নানা ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। কিন্তু এ দেশের জনগণ সেসব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। এখন ৩৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন এ দেশ পুর্নগঠন করতে। আওয়ামী শাসনামলে ৮০ পার্সেন্ট টাকা লোপাট করা হয়েছে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আদর্শিক নানা মতপার্থক্য নিয়ে আপনারা বিভিন্ন দলের রাজনীতি করবেন এটাই রাজনৈতিক সৌন্দর্য্য। কিন্তু বাংলাদেশের প্রশ্নে, স্বাধীনতার প্রশ্নে, ঐক্যের প্রশ্নে, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে প্রয়োজন হলে আবার একসঙ্গে সবাইকে জেগে উঠতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যশোর সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, ৭১-এর যুদ্ধে আমাদের হাতে অস্ত্র ছিল। কিন্তু ২৪ এর আন্দোলনে কিছুই ছিল না, তবুও নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।
একটি রাজনৈতিক দলকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, শহরের চাতাল মোড়ে যারা মিছিল করেছে, তাদের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এ সময় তিনি বলেন, আমরা যদি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে না পারি, তাহলে পুনরায় বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। এ সময় তিনি সুখী সমৃদ্ধশালী, মানবিক বাংলাদেশ গড়তে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে পাশে থাকার আহবান জানান।
যশোর সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাড. গাজী এনামুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা পরিষদ যশোরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম যশোরের সভাপতি ডা. শরিফুজ্জামান রঞ্জু, জুলাই ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি সামিউল আলম শিমুল। আরও বক্তব্য রাখেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদ যশোরের বেনাপোলের আব্দুল্লাহ পিতা আব্দুল জব্বার, ছাত্র প্রতিনিধি আমানুল্লাহ প্রমুখ। শেষে হামদ, নাত, গজল এবং শিশুদের অংশগ্রহণে জুলাই নিহতদের স্মরণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যশোর সংস্কৃতি কেন্দ্রের সদস্য মাহাদী হাসান।