বাংলার ভোর প্রতিবেদক
পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে গেলেন যশোরের খাজুরা মণীন্দ্রনাথ মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারিহা সুলতানা (১৩)। সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। গত ২৩ জুলাই যশোর সদর উপজেলার কোদালিয়া বাজারে যশোর-মাগুরা সড়কে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি যাত্রীবাহী বাসে উঠতে গেলে তাড়াহুড়ো করে চালক বাস ছেড়ে দিলে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় ফারিয়া। এই ঘটনায় ঘাতক বাস চালক কিংবা কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
ফারিহা যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের মাহবুবুর রহমানের মেয়ে। এদিকে রাত ১০টার দিকে ফারিহার মরদেহ তার বাড়িতে পৌঁছালে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় তার বাড়িতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হাজারো শোকার্ত মানুষ ভরে শিশু ফারিহার ছোট্ট ঘরের আঙিনায়। রাতে তার জানাজায় অংশ নেয় তার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ হাজারো শোকার্ত মানুষ। যাদের সকলের চোখই ছিল ছোট্ট শিশু ফারিহাকে হারানোর বেদনায় অশ্রুসিক্ত।
ফারিহার চাচা গোলাম রসূল বলেন, ‘ফারিহাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। দুর্ঘটনায় ফারিহার কোমর, দুই পা পর্যন্ত এমনভাবে পিষ্ট হয়েছে, কোনটি কি সেটা বুঝার উপায় নেই। পাঁচদিন ধরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা চলছিলো। তার ডান পায়ে পচন ধরেছিলো। সোমবার দুপুরে তার অস্ত্রপচার হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তার আগেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে আল্লাহ ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেল সে।
তিনি বলেন, ‘ফারিহার বাবা হতদরিত্র। কিন্তু তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখতেন। সব সন্তানকেই পড়াশোনা করিয়েছেন। ফারিহাকে খুব আদর করতেন। দুর্ঘটনায় এভাবে সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় তার মা বাবা। এভাবে যেন কারও সন্তান অকালে ঝরে না পড়ে; এই জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান ফারিহার এ চাচা।
জানতে চাইলে খাজুরা মণীন্দ্রনাথ মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, ‘সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়েটি সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়েছে। খবর পেয়ে স্কুলের বাচ্চারা বিমর্ষ হয়ে পড়েছে। তাদের ছুটি দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিদিনের মতো স্কুলে যাওয়ার জন্য সড়কের পাশে বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে ছিল ফারিয়া। যশোর থেকে ছেড়ে আসা মাগুরাগামী যাত্রীবাহী লোকাল বাস সকাল ৯টার পরপরই কোদালিয়া বাজারে এসে থামে। এ সময় ফারিহা বাসে উঠতে গেলে তাড়াহুড়ো করে চালক বাস ছেড়ে দিলে তার কোমরের ওপর দিয়ে বাসের পিছনের চাকা উঠে যায়। এতে ফারিহা গুরুতর জখম হয়। তখন গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুপুর ১২টার দিকে আহত ওই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাসটি ভাঙচুর করে এবং যশোর-মাগুরা মহাসড়ক অবরোধ করে খাজুরা বাজার বাসস্ট্যাণ্ড এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
ফারিহা চার ভাই বোনের মধ্যে মেঝো। ফারিহার বাবা হতদরিদ্র কৃষক। পরের জমিতে কৃষি কাজ করেই সংসার চালান। সড়ক দুর্ঘটনায় ফারিহার কোমরের অংশ থেকে পা পর্যন্ত পিষ্ট হয়ে গেলে হতদরিদ্র পরিবারে হঠাৎ করে এই দুর্ঘটনায় পাগলপ্রায় বাবা মাহবুবুর রহমান।
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, ‘ঘটনার দিন বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা যশোর মাগুরা সড়ক অবরোধ করে। সেখানে আমি গেছিলাম। তাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলাম বাসচালক ও হেলপারকে আটকে। আমরা এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি। অভিযান অব্যহত রয়েছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার কোন অভিযোগ বা মামলা করেনি। তারা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে এই দুর্ঘটনায় নিহত ফারিহার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি যশোরের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে দুর্ঘটনায় জন্য দায়ী বাসচালক, হেলপারকে আটক ও দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ফুটওভার ব্রিজ, স্পিড ব্রেকার, জেব্রা ক্রসিং ও ট্রাফিক ব্যবস্থার নিশ্চিতসহ ৫ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে নেতৃবৃন্দ।