বাংলার ভোর প্রতিবেদক
অনলাইন জুয়ায় হেরে মানসিক ও পারিবারিক অশান্তির জেরে যশোরে একদিনে দুইজন আত্মহত্যা করেছেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে অভয়নগরে মনিরুজ্জামান (২৫) ও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি বাজারে হৃদয় দেব (১৮) নামে দুজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
মৃত হৃদয় দেব যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলতদিহি গ্রামের বাসু দেবের ছেলে ও মনিরুজ্জামান কুড়িগ্রামের বুড়িঙ্গামারি উপজেলার কাশেমগঞ্জের জিলাই মন্ডলের ছেলে।
মৃত হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা জানান, চুড়ামনকাটি বাজারের ইসমাইল হোসেনের ফার্মেসিতে চাকরি করতেন হৃদয়। মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে ফার্মেসিতে যান তিনি। পরে তারা জানতে পারেন হৃদয় ফার্মেসির মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি-হৃদয় সম্প্রতি অনলাইনে জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন। তাদের ধারণা অনলাইনে জুয়া খেলায় হেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
ফার্মেসি মালিক ইসমাইল হোসেন জানান, প্রতিদিন সকালে ফার্মেসি খুলেন হৃদয় দেব। মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে তিনি এসে ফার্মেসির শার্টার বন্ধ দেখতে পান। শার্টার তুলে ভেতরে উঁকি দিতেই দেখেন, হৃদয়ের লাশ ঝুলছে। এ সময় তার চিৎকারে আশপাশের ব্যবসায়ীরা ছুটে যান। তবে কী কারণে হৃদয় আত্মহত্যা করেছেন তা বুঝতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ইসমাইল হোসেন।
নিহতের বাবা বাসুদেব জানান, সকালে নাস্তা করে হৃদয় দোকান খোলার কথা বলে বাড়ি হতে বের হয়। এরপর তিনি জানতে পারেন তার ছেলে দোকানের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আব্দুর রউফ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দেন ওই ছেলেটি। স্থানীয়রা বলেছেন, তিনি খুব ভালো স্বভাব চরিত্রের ছিলেন। মোবাইল ফোনে গেম খেলতেন। আত্মহত্যার কারণ এখনো জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
এদিকে, অভয়নগরে অনলাইনে জুয়া খেলে টাকা খুইয়ে মনিরুজ্জামান (২৫) নামে মিল শ্রমিক সিলিং ফ্যানের সাথে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বেলা ১২টায় যশোর জুট ইণ্ডাস্ট্রি (জেজেআই) মিলের আবাসিক এলাকায়। স্থানীয়রা মৃতদেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলতে দেখে প্রতিবেশী সকলকে খবর দেন। প্রতিবেশীরা ঘরের দরজা ভেঙ্গে মনিরুজ্জামানের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
মনিরুজ্জামানের স্ত্রী শাহিনা জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী যশোর জুট ইণ্ডাস্ট্রিতে শ্রমিকের চাকুরি করেন। তাদের মুন্নি নামে ৪ বছর বয়সের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্বামী স্ত্রীর আয়ে তিনজনের সংসার সুখেই কাটছিল। হঠাৎ করে মনিরুজ্জামান মোবাইল ফোনে জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন। প্রায় সে জুয়া খেলায় টাকা খুয়েই আসতেন। নিজের কাছে টাকা না থাকলে জুয়া খেলার জন্য স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় টাকার জন্য চাপ দিতেন। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকতো। ঘটনার আগের দিন সোমবার এনিয়ে দু’জনার মধ্যে ঝগড়া হয়। স্ত্রী শাহিনাকে মনিরুজ্জামান বেদম মারপিট করেন। শাহিনা তার মেয়েকে নিয়ে ওই দিন বিকেলে পাশেই নিকট এক আত্মীয়ের বাসায় চলে যান। মঙ্গলবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখেন তার স্বামীর মৃত দেহ।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলীম জানান, এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর মর্গে পাঠানো হয়েছে।