কাজী নূর
আমি ছোটবেলা থেকেই আদালতের বারান্দায় ঘুরেছি। ঘুরেছি থানা হাজত থেকে শুরু করে জেলাখানা পর্যন্ত, একটিবার আমার বাবার মুখ দেখবো বলে। তাই থানা পুলিশ, জেল হাজত আমি পরোয়া করিনা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন করার কারণে অন্যায়ভাবে বারবার আমার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি জানতাম যোগ্যতা থাকলেও ফ্যাসিস্ট রেজিমে আমার সরকারি চাকরি কোনদিন হবে না। কারণ আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করেন। আমার মতো এদেশে এমন অনেক পরিবার আছে যারা ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতি করেন। তাই বলে তারা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হবে! এমনিতে আমাদের পরিবার ফ্যাসিস্ট হাসিনার হামলা, মামলা, নির্যাতনের স্বীকার। তাই মরবো, না হয় মারবো এসব ভেবে বিবেকের তাড়নায় জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিই।
কথাগুলো বলছিলেন, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ (এমএম কলেজ) থেকে ২০২৫ এ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী গত জুলাইয়ে এক দফা আন্দোলনে অংশ নেয়া যোদ্ধা সায়মা জামান জেবা।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ‘জুলাই নারী ঐক্য’র আয়োজনে ‘৩৬ জুলাই’র নারী যোদ্ধাদের পুনর্মিলনী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নারী যোদ্ধারা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘জুলাই নারী ঐক্য’র সদস্য সচিব খন্দকার রুবাইয়া।
কবি মামুন আজাদের সঞ্চালনায় এ সময় জুলাই যোদ্ধা ফারহানা হোসেন অরণ্য বলেন, পয়ত্রিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যশোরে ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে অংশ নিই। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসে, ট্রেনে চেপে আন্দোলন স্থলে পৌঁছায়। সরকারি দল ও তাদের পোষ্য পেটুয়া বাহিনীর লাঠিচার্জ সহ্য করেছি। গুরুতর আহত সহযোদ্ধাদের হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তবু ভয়ে পেয়ে ঘরে ফিরে যাইনি।
ফারহানা অরণ্য আরো বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেলেও আমাদের বিশ্বাস হয়নি। কারণ শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করেনা। শেখ হাসিনার সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সমস্ত মানুষের মাথায় যা বুদ্ধি তা একা হাসিনার মাথায় আছে। অনেক ত্যাগ, রক্ত, জীবনের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে।
এ সময় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা এখনো ফ্যাসিজমের মধ্যে রয়ে গেছি। সিস্টেম পরিবর্তন করতে পারিনি। একটি রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করে তারা বলেন, এখন বলা হচ্ছে নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র। কিন্তু আগে সংষ্কার তার পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। তবেই জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্খা প্রতিফলিত হবে।
স্মৃতিচারণ করে আরো বক্তব্য রাখেন, আসমা ইসলাম, আঁখি খাতুন, সাদেকা শাহানী উর্মি, জয়া জাকির, খাদিজা আক্তার, উম্মে সাদিয়া, সালেহা সুলতানা উষা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কাজী মুনিরুল হুদা, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যশোর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মুনির আজাদ, মেহেদি উর রহমান টুটুল, সাংবাদিক সালমান হাসান রাজীব প্রমুখ।
শিরোনাম:
- শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে ভালো শিক্ষক দরকার : টিএস আইয়ূব
- ‘বিবেকের তাড়নায় জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিই’
- বিল হরিণা বাঁচাও আন্দোলনের মতবিনিময় সভা
- সুরবিতানের ত্রৈমাসিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
- সরকার পরিবর্তন হলেও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি
- যশোরে সবজির বাজারের দাম চড়া, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
- যশোরে ধর্ষণ ও ভ্রুণ নষ্টের অভিযোগে মামলা
- যশোরে ভাটা শ্রমিক ধর্ষণ, দুইজনের নামে চার্জশিট