বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ভারতে পাচারের জন্য স্বর্ণ চোরাচালানীদের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে যশোর সীমান্ত। এই পথ দিয়ে দিনে ও রাতে বাংলাদেশ থেকে পার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ এবং ভারত থেকে আসছে ফেন্সিডিল, গাঁজা, ওষুধ, মাছের পোনা, মোবাইল ফোন, কসমেটিক্স, কেমিকেল। আর এই ঘাট চালানোর নেপথ্যে রয়েছেন সীমান্তের প্রভাবশালী একটি মহল। প্রশাসনের আঁড়ালে অবৈধ পন্থায় ঘাট চালিয়ে তারা কামিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন হাউজের পেছন থেকে শুরু করে রঘুনাথপুর সীমান্ত পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে দিনে ও রাতে চলে স্বর্ণ পাচারের মহোৎসব।
৪ মে দুপুরে যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন মানিকগঞ্জের যুবক শুভ ঘোষ। পরনের জিনস প্যান্টের ডান পকেটে লুকিয়ে ১০টি স্বর্ণের বার ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন। উদ্ধার হওয়া প্রায় এক কেজি ১৯৩ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য এক কোটি বিশ লাখ টাকা। স্বর্ণের বারসহ তাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
সর্বশেষ ৩০ জুলাই যশোর সদরের চুড়ামনকাটি এলাকায় প্যান্টের ভেতর কোমরে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা ৪২০ গ্রাম ওজনের দুটি স্বর্ণের বারসহ জাহিদ মন্ডল (৩৬) নামে একজনকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদ বিজিবিকে জানান, তিনি ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকার চোরাকারবারীদের কাছ থেকে সোনার বারগুলো নিয়ে যশোর হয়ে বেনাপোল সীমান্ত পথে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন।
শুধু এই দুটি ঘটনা নয়, চলতি বছরের সাত মাসে ভারতে পাচারের সময় যশোর জেলায় সাত কেজি ৫৫৪ গ্রাম স্বর্ণ ও ৭০ কেজি ৫শ’ গ্রাম ওজনের রুপা উদ্ধার করেছে বিজিবি। ভারতের সঙ্গে যশোর জেলার ৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাচ্ছে স্বর্ণ ও রূপার চালান। আর বাংলাদেশে আসছে মাদক, অস্ত্র ও ভারতীয় ওষুধ, পোশাক ও প্রসাধনী সামগ্রী।
৪৯ বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়ন সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিজিবি যশোরে অভিযান চালিয়ে তেতাল্লিশ কোটি আটষট্টি লাখ সতের হাজার একশ’ আঠার টাকা মূল্যের চোরাচালান পণ্য উদ্ধার করেছে। এ সময় ৪৯ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে।
বিজিবির উদ্ধার তালিকায় রয়েছে- সাত কেজি ৫৫৪ গ্রাম স্বর্ণ, ৭০ কেজি ৫শ’ গ্রাম রুপা, ৩৭ লাখ ৮০ হাজার ইউএস ডলার, একটি দেশী পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- সাত হাজার ৫৭২ বোতল ফেনসিডিল, এক হাজার ৮৬২ বোতল বিদেশি মদ, ২৪ দশকি ১২৫ লিটার দেশি মদ, ১৯৮ পিস ইয়াবা, ৫শ’ গ্রাম হেরোইন, ১৬ বোতল বিয়ার, ১৭ হাজার ৫২ পিস নেশা জাতীয় ট্যাবলেট, ১৯৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, কম্বল, কসমেটিক্স, ওষুধ, সামগ্রি ও বিভিন্ন ধরনের চোরাচালানি পণ্য।’
জানা যায়, বেনাপোল চেকপোষ্ট হতে রঘুনাথপুর সীমান্ত পর্যন্ত চোরাচালানের রুট হিসাবে ৬টি ঘাট ব্যবহার করা হয়। ঘাটগুলো জয়ন্তীপুর পোতার পোস্ট, ডাক্তার বাড়ি, লেবুতলা পোস্ট, নাপিত বাড়ি জল ঘাট, ইদুর বাড়ি পোস্ট, আমবাগান মাঠ পোস্ট অন্যতম।
এদিকে একের পর এক আটক হলেও প্রকৃত মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে, পাচারকারীদের যে সব সদস্য ধরা পড়ছেন তারা বলছেন আমরা বাহকমাত্র। কিছু টাকার বিনিময়ে এসব স্বর্ণ একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়াই আমাদের কাজ। কিন্তু তাদের কাছে স্বর্ণের বারগুলো কারা দিয়েছেন, তা জানা যায় না।
এ বিষয়ে ৪৯ বিজিবি-যশোর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ্ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, যশোর ব্যাটালিয়নের ৭০ দশমিক ২৭৪ কিলোমিটার সীমান্ত পথ রয়েছে। সীমান্তরক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বিজিবি। স্বর্ণ, রূপা, মাদক, অস্ত্র, হুন্ডি ও অন্য চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির গোয়েন্দা তৎপরতা ও আভিযানিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’