বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সাগর আর ফিরবে না তার প্রিয় কক্ষে, বসবে না প্রিয় চেয়ারটিতে। ওকে যেদিন চেয়ারটি দিয়েছিলাম সেদিন বসার পর খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে বলেছিল ‘বাহ চেয়ারটা দারুণ’ এই কেউ বসবি না এটাই। হ্যা বলছিলাম যশোরের সংবাদপত্র অঙ্গনের প্রিয় মুখ, দৈনিক বাংলার ভোর পত্রিকার কম্পিউটার ইনচার্জ আবু সাঈদ সাগরের কথা। এক বুক দুঃখ আর বেদনা নিয়ে মঙ্গলবার ওকে চিরবিদায় জানিয়েছে যশোরের সংবাদপত্র সংশ্লিস্টরা। সাথে ছিল নানা বন্ধু-স্বজন-পরিবার-পরিজন-শুভানুধ্যায়ীরা।
এদিন বাদ জোহর শহরের বারান্দীপাড়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজা শেষে বারান্দী পূর্বপাড়া কবরস্থানে সাগরকে দাফন করা হয়। প্রিয়জনের বিদায়ে স্বজন, সহকর্মী, সাংবাদিক সমাজসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কেঁদে ফেলেন। জানাজায় ইমামতি করেন সাগরের জমজ বড় ভাই গ্রামের কাগজের চীফ কম্পিউটার অপারেটর আবু সাআদ শাওন।
এর আগে মৃত্যুসংবাদ পৌঁছানোর পর সোমবার গভীর রাত থেকেই সাগরের বাড়িতে ভিড় করেন শুভানুধ্যায়ীরা। ফোনে ফোনে বাংলার ভোর সম্পাদকের কাছে নিশ্চয়তা চান সাগরের মৃত্যুর বিষয়ে। হঠাৎ সাগরের চলে যাওয়া যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না কেউ। তাঁর অকাল প্রয়াণে পরিবার ও সহকর্মীরা হয়ে পড়েন শোকাভিভূত।
জানাজায় অংশগ্রহণ করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান ।
জানাজার শুরুতে বক্তব্য দেন গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন। তিনি বলেন, শাওন ও সাগর দুই ভাইয়ের হাত ধরেই গ্রামের কাগজের পথচলা শুরু হয়েছিল। কম্পিউটার বিভাগে সাগর ছিলেন নীরব কর্মযোদ্ধা।
স্মৃতিময় ও আবেগঘন স্মরণ করে কথা বলেন সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও কল্যাণ সম্পাদক একরাম-উদ-দ্দৌলা।
সাগরের একমাত্র পুত্র রাজিন মাহমুদ তার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলার ভোর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সৈয়দ আবুল কালাম শামছুদ্দীন জ্যোতি, কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এহসান-উদ-দ্দৌলা মিথুন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এজাজ উদ্দিন টিপু, বিবর্তন যশোরের সভাপতি নওরোজ আলম খান চপল, যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও গ্রামের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি দেওয়ান মোর্শেদ আলম, গ্রামের কাগজের সহকারী সম্পাদক জাহিদ আহমেদ লিটন, যশোর জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওমর ফারুক তারেক, ছাপাখানা মালিক সমিতির নেতা আবুল কাশেমসহ সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় বাংলার ভোর দপ্তরে কর্মরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছটা সুস্থ হয়ে কার্যালয়ে আসলেও রাত ১১ টার দিকে বাড়িতে গিয়ে আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় ঢাকায়। সর্বশেষ সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের স্ট্রোক ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবু সাঈদ সাগর ইন্তেকাল করেন।
দীর্ঘদিন ধরে সাগর বিভিন্ন সংবাদপত্রে কম্পিউটার বিভাগে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সর্বশেষ তিনি বাংলার ভোর পত্রিকায় কম্পিউটার ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, একমাত্র সন্তান, মা, ভাইসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এদিকে তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলার ভোর সম্পাদক সৈয়দ আবুল কালাম শামছুদ্দীন জ্যোতি। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, সাগর শুধু কর্মীই ছিল না সাগর ছিল তার দীর্ঘ ২৬ বছরের সহকর্মী। মাত্র কলেজ ছাড়া সাগর যখন সংবাদপত্র জগতে প্রবেশ করে তখন থেকেই তার সাথে কাজ করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার সাথে কাজ করে গেলেন। সাগরের ক্ষতি অপূরণীয় হয়েই থাকবে আমার জীবনে।