বাংলার ভোর প্রতিবেদক
তৃপ্তির সাথে পোলাও, মাংস, ডিম দিয়ে দুপুরের আহার করলেন রিকসা চালক হাসান মিয়া। পাশে বসেই শ্রমজীবী হায়দার আলীও একই খাবার খেলেন। শুধু হাসান মিয়া বা হায়দার আলীই নন, এমন তিন শতাধিক শ্রমজীবী, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের মুখে উন্নত মানের খাবার তুলে দিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা। শুক্রবার এই আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হলো ‘আইডিয়া ফ্রাইডে মিল’র ২০০তম সপ্তাহ। প্রায় চার বছর আগে প্রতি শুক্রবারে শুরু হওয়া এই মানবিক প্রকল্পটি অব্যাহত রেখে আইডিয়া ফ্রাইডে মিল পার করলো দ্বিশতকের মাইলফলক।
‘আইডিয়া ফ্রাইডে মিল’র ২০০তম সপ্তাহে যশোরের খড়কীতে অবস্থিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার কার্যালয়ে শুক্রবার জুমা’র নামাজের আগে ও পরে তিন শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। বিশেষ এই আয়োজনে মেন্যুতে ছিল পোলাও, মাংস, ডিম, সালাদ ও ডাল। আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবীরা দাওয়াত করে এনেছিলেন এই শ্রমজীবী, মেহনতী মানুষদের। সাথেই ছিল পথশিশু, এতিম শিশু এবং বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও মেসের গৃহকর্মীরা। সমাজের বঞ্চিত এই মানুষদের বসিয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেদের রান্না করা খাবার যত্ন ও সম্মানের সাথে পরিবেশন করেন। স্বেচ্ছাসেবীরা শুধু খাবার দেননি, বরং ভালোবাসা ও যত্ন নিয়ে নিজের হাতে বেড়ে খাইয়েছেন। কেউ বৃদ্ধের হাত ধরে বসার জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন, কেউ ছোট্ট শিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে তার প্লেটে খাবার পরিবেশন করেছেন।
রেলস্টেশন এলাকা থেকে আসা এক বৃদ্ধা খাবার সামনে নিয়ে বলেন, ‘শুক্রবারে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করি, কারণ এই খাবারের স্বাদ সারা সপ্তাহে আর পাই না।’
শ্রমজীবী হায়দার বলেন, ‘ওরা এত ভালো মানের খাবার দেয়, এত মজা হয় আমরা ভাই সারাজীবনে এমন খাবার রান্না করতে পারিনা। ওরা নিজেরা রান্না করে দিয়ে আসে আমাদের।’
আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মো. হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘২০২১ সালে শুরু করা এই উদ্যোগ একাধারে ২০০ তম সপ্তাহ অতিক্রম করলো। আমি মনে করি, সেই কাজই উত্তম, যা নিয়মিত করা হয়। আমরা চাই-এই প্রকল্প যেন কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকে। আমার শিক্ষার্থীদের আমি এটুকুই বোঝাতে চাই, সাধ্য অনুযায়ী যেন ওরা ওদের আশেপাশের মানুষদের দায়িত্বও নিতে পারে।’
২০০ তম ফ্রাইডে মিল এই আয়োজনের সমন্বয়ক তানজিয়া জাহান মমতাজ বলেন, ‘এর মূল নেপথ্যের মূল কান্ডারী আমাদের হামিদুল স্যার। এখানে আইডিয়া পিঠা পার্ক’র লভ্যাংশের ৩৫% সরাসরি এই সেবায় ব্যয় করা হয়। এছাড়াও অনেক শুভাকাক্সক্ষী তাদের প্রিয়জনের জন্মদিন, মিলাদ বা বিশেষ উপলক্ষের ভালো কাজ হিসেবেও এখানে যুক্ত হন।’
আয়োজকরা জানান, ২০২১ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ‘আইডিয়া ফ্রাইডে মিল’ বিগত ১৯৯ সপ্তাহ ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে। শ্রমজীবী, ভিক্ষুক, এতিম শিশু, গৃহপরিচারিকা ও অসহায় বৃদ্ধদের কাছে এই উদ্যোগ এখন যশোরের এক উজ্জ্বল সামাজিক উদাহরণে পরিণত হয়েছে।