বাংলার ভোর প্রতিবেদক
তরকারির দাম নিয়ে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। বিষয়টি হাতাহাতির পর্যায়ে এলে বিবাদ মিটিয়ে দেন উপশহরের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন। ঘটনার বিবরণ জানিয়ে ক্রেতা ঘোপের চৌধুরী আবরার পাভেল বলেন, তিনি ১ কেজি ঢেরষ ৮০ টাকার স্থলে ৭০ টাকা বলায় বিক্রেতা চটে যান। এটা থেকেই তর্ক বিতর্ক, এছাড়া কিছু না। আবরার পাভেল আরো বলেন, রোজ রোজ তরকারি দাম আকাশছোঁয়ার মতো পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিক্রেতারা। ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিভিন্ন তরকারি দাম। এটা সাধারণের নাগালের বাইরে। তরকারির ছাড়াও তো আরো কিছু কেনাকাটার থাকে। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এত দাম দিয়ে শুধুমাত্র তরকারি কিনলে একজন মানুষকে কত টাকা রোজগার করতে হয় ভেবে দেখেছেন!
তরকারির দাম ক্রমেই সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে স্বীকার করে যশোর শহরের হাজী মোহাম্মদ মহসিন রোড বড় বাজারের তরকারি বিক্রেতা মাজেদ আলী বলেন, আড়তে সবজির আমদানি অন্যান্য সময়ের চাইতে চাহিদার তুলনায় অস্বাভাবিক কম। তরকারি দাম বৃদ্ধি বা কমানোতে আমাদের কোন হাত নেই। প্রকৃতপক্ষে সবজির মাঠ ফাঁকা। অতিবৃষ্টি কারনে সব গাছ মরে গেছে। আশপাশে কিছু উচু জমি আছে বিধায় সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সেই সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
সবজি বিক্রেতা মাজেদ আলী আরো বলেন, আড়ত থেকে যেমন দামে কিনি দোকান ভাড়া, খাজনা, লেবার খরচ সহ সামান্য লাভ রেখে মাল বিক্রি করি। কিন্তু ক্রেতাদের ধারণা আমরা ইচ্ছা করে বেশি দাম মাল বিক্রি করি।
এমন অপ্রীতিকর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে জানিয়ে যশোর হাজী মোহাম্মদ মহসিন রোড বড় বাজারের তরকারি বিক্রেতা ইমদাদুল হক বলেন, তরকারির বৃহৎ পাইকারি মোকাম সাতমাইল বারী নগর বাজারেই তরকারি আমদানি নেই। যেটুকু আসছে বাড়তি দাম দিয়ে আমাদের কিনতে হচ্ছে। তার উপর নানা খরচ যোগ করলে তরকারি দাম একটু বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু ক্রেতারা এসব বুঝতে চান না।
শহরের হাজী মোহাম্মদ মহসিন রোড বড় বাজার ঘুরে বাজারের এমন দেখা মেলে শুক্রবার ৮ আগস্ট। তরকারির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি থেমে নেই মাছ, মুরগী, ডিমের বাজার। গোটা বাজারই যেন আগুনে ছয়লাব। একদিকে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস অপরদিকে বিক্রেতাদের অসহায়ত্বে বাজারে অশান্তির বাতাস বইছে।
বর্তমানে কাঁচা মরিচ মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেগুন ১২০, বরবটি ১২০, কাকরোল ৮০, উচ্ছে ৮০, ওল ৮০ লাউ ৬০ (প্রতি পিস) পটল ৬০, আমড়া ৪০, কচুর মুখি ৪০, ধুন্দল ৫০, পুঁইশাক ৪০, পেঁপে ৪০, কলা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর মধ্যে পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছে একটু একটু করে। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে বর্তমানে তা ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আলু ২০, রসুন ১২০, আদা মানভেদে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা মাহমুদ সুজন বলেন, হঠাৎ করে পেঁয়াজের বাজার বাড়ছে। দাম বৃদ্ধির জন্য বৃষ্টিকে দায়ি করে সুজন বলেন, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বৃষ্টি কমলে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমতে পারে। এছাড়া বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। তবে বৃদ্ধি পেয়েছে দেশি মসুরির ডালের দাম। বর্তমানে দেশি মসুরির ডাল ১৪০, ছোলার ডাল ১০৫, মুগ ডাল ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মুরগীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগী ১৮০, সোনালী ৩০০, লেয়ার ৩২০ এবং দেশি ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ব্রয়লার ১৭০, সোনালী ২৮০, লেয়ার ৩০০। বড় বাজারের রাজ ব্রয়লার হাউজের মালিক রাজ শেখ জানান, বৃষ্টির কারনে মুরগীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক ফার্মে পানি উঠে গেছে। বেশকিছু ফার্ম মালিক উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে সব রকম মুরগীর দাম কমবে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে সব রকম মাছের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন পানি বৃদ্ধির কারনে মাছ ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাজারে সরবরাহ কম এবং বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ৯০০ থেকে ১ কেজি ওজনের রুই মাছ ৩০০ টাকা কেজি, ৩ থেকে চার কেজি ওজনের রুই ৫০০ টাকা কেজি, ২ থেকে আড়াই কেজি ওজনের রুই ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের কাতলা ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ২ থেকে আড়াই কেজি ওজনের গ্রাসকার্প ৩০০ টাকা, বাটা ২৫০ টাকা, কই ২৫০ টাকা, পাবদা আকার ভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২৫০০ টাকা কেজি, ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা, তিন পিসে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ৯৫০ এবং দুই পিসে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ মাছ বিক্রেতা ওহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে সাগরে মাছ ধরা যাচ্ছে না। বৃষ্টি কমলে ইলিশের দাম কমবে বলে তিনি জানান।
বড় বাজার চাউল চান্নি ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বাসমতী চাল ৮২, নাজির শাইল ৮০, কাটারি ভোগ ৭৮, মিনিকেট ৬৪, কাজল লতা ৬৬, স্বর্ণা ৫৪, সুবল লতা ৫৮ এবং ২৮ জাতের চাল ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নিউ মা কালী ভান্ডারের মালিক অভিজিৎ ভৌমিক বলেন, এ বছর চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে মজুদদার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বাড়লে চালের বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে।
গত সপ্তাহে হঠাৎ গরম হয় ডিমের বাজার। বর্তমানে লাল ডিম ৪৫ টাকা, বাদামী ডিম ৪৩ টাকা এবং সাদা ডিম ৪০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। শহরের দড়াটানার দিলরুবা ট্রেডার্সের মালিক শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, ডিমের সরবরাহ কম। বৃষ্টির কারনে অনেক ফার্ম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।