বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের নওয়াপাড়ায় ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বুকসমান বালুতে পুঁতে রেখে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছে অভিযুক্ত বিএনপি নেতার পরিবার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্ত পদ স্থগিত হওয়া বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির বোন মানজারমিন ইলোরা প্রেস ক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৭০ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গম সরবরাহের নামে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। পরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা টিপুর বিরুদ্ধে নওয়াপাড়া সার ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধে মধ্যস্থতাকারী হন জনি। এই কারণেই টিপু ষড়যন্ত্র করে অপহরণের নাটক সাজিয়ে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় জড়িয়েছেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর ওরফে টিপু নওয়াপাড়া এলাকার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। ঘটনার বিচার চেয়ে গত ৩১ জুলাই অভয়নগরের রাজঘাট সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীরের স্ত্রী আসমা খাতুন। পরে ২ আগস্ট টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন বাদী হয়ে বিএনপি নেতাসহ ছয়জনের নামে অভয়নগর থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ডিস ব্যবসায়ী মিঠু ও বিএনপি নেতা জনির বাবা কামরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের দুজনকেই কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত চার আসামি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির পদ স্থগিত হওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি, পৌর বিএনপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাট হোসেন, নওয়াপাড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দপ্তরী ও গরু হাটখোলার সৈকত হোসেন হিরা। অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিম জানান, বাকিদের আটকে অভিযান চালছে।
সংবাদ সম্মেলনে জনির বোন মানজারমিন ইলোরা লিখিত বক্তব্যে জানান, শাহনেওয়াজ কবীর টিপু নওয়াপাড়ার আলোচিত প্রতারক ব্যবসায়ী। নওয়াপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ৭০ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গম দেয়ার নাম করে ৪৯ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। ওই সব ব্যবসায়ীরা গত ১৩ জানুয়ারি নওয়াপাড়া সার ও খাদ্য শস্য ব্যবসায়ী সমিতির বরাবর পাওনা টাকা আদায়ে আবেদন দেন। এরপর ব্যবসায়ী টিপুসহ তার পাওনাদারদের নিয়ে ৮ দফা সমিতির অফিসে নেতৃবৃন্দ মিটিং করে। মিটিংয়ে টিপু নিজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের প্যাডে পাওনাদারদের নাম উল্লেখ করে টাকার পরিমাণ নিশ্চিত করেন।
ব্যবসায়ী টিপু নাবিল গ্রুপের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসাবে নওয়াপাড়াতে কাজ করছিলেন। তাই জনি তার ব্যবসায়ের জন্য টিপুর কাছ থেকে গম ক্রয় ও ডেলিভারি ব্যবসা করে আসছিলেন। একপর্যায়ে ৪ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা টিপু গ্রহণ করেও গম ডেলিভারি বন্ধ করে দেয়। এতে জনির ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় টিপু চুক্তি অনুযায়ী (আরটিজিএস) মাধ্যমে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ২ কোটি টাকা পরিশোধ করে। পুরো টাকা না দিলেও জনি টিপুকে কোন প্রকার জোরজবরদস্তি করেনি। হঠাৎ করেই থানা ও সেনা কেম্পে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ দেয় গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর টিপুকে সন্ত্রাসীদের দিয়ে অপহরণ করে কণা ইকোপার্কে বুক সমান বালুর মধ্যে পুঁতে টাকা আদায় করেছে।
বক্তব্যে বলা হয়, আসাদুজ্জামান জনি দীর্ঘদিন ধরে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সক্রিয় নেতা এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। তার রাজনৈতিক উত্থান ঠেকাতে প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।