বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছায় প্রতিবন্ধী এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনার ১৩ দিন পর মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার ভিকটিম ওই নারী চৌগাছা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ১ আগস্ট (শুক্রবার) দুপুরে চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া গ্রামের সফির উদ্দিনের বাড়িতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
আসামিরা হলেন, সুখপুকুরিয়া গ্রামের ওমর আলীর ছেলে সফির উদ্দীন (৪০) ও বজলুর রশিদের ছেলে বাবলু (৩৫)।
ভিকটিম সনাতন ধর্মাবলম্বী ও হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য। অভিযুক্তরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় শালিসের আশ্বাসে সময়ক্ষেপণ করেন। এজন্য মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশের তৎপরতায় মামলা হয়।
ভিকটিমের স্বজনরা জানান, চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভিকটিম নারী শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তার দেড় বছর বয়সী সন্তান রয়েছে। গত ১ আগস্ট (শুক্রবার) ঘটনার দিন সকালে প্রতিবেশি বজলুর রশিদের ছেলে বাবলু এসে জানায়, ভিকটিমের স্বামী কলা ও আমড়া কিনে সফিরউদ্দীনের বাড়িতে রেখে গেছেন। ভিকটিম প্রথমে তার কথায় গুরুত্ব দেননি। কিছুক্ষণ পর বাবলু ফের এসে একই কথা বলে। তার কথায় বিশ্বাস করে দেড় বছর বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে তরকারি আনার জন্য সফিরউদ্দীনের বাড়িতে যান ওই নারী। বাড়িতে পৌঁছলে সফিরউদ্দীন তাকে ঘরের ভেতর যেতে বলেন।
এ সময় শিশুটি কান্নাকাটি করলে বাবলু তাকে পেয়ারা দেয়। এরপর সুযোগ বুঝে সফিরউদ্দীন জোরপূর্বক নারীকে ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে বাবলুর সহায়তায় ধর্ষণ করে। এ সময় তাকে মারধর ও হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কাউকে কিছু বলেননি। পরে পরিবারের সদস্যদের কাছে ঘটনা খুলে বলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিযুক্তরা প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দেন। কিন্তু দিন গড়িয়ে গেলেও কোন আপোস-মীমাংসায় আগ্রহী হয়নি তারা। বিষয়টি নিয়ে গ্রামের সচেতন মানুষের মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। খবর পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চৌগাছা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত (১৩ আগস্ট) ভিকটিম চৌগাছা থানায় অভিযুক্ত দুইজনের নামে মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। ভিকমিট বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। দুই আসামি গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ভিকটিম খুবই দরিদ্র পরিবারের। ঘটনার পর ভিকটিম ও তার পরিবার চাচ্ছিলেন স্থানীয়ভাবে মীমাংসার। এজন্য পুলিশের কাছে আসতে দেরি করেছেন। আমাদের কাছে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি।
এ বিষয়ে যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও উদ্বেগের। ভিকটিমের বিষয়ে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুপার মহোদয়কে অবহিত করেছি। তিনি খুবই দ্রুততার সঙ্গে আইনী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এজন্য তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। মামলা হয়েছে, আশা করি ভিকটিম ন্যায়বিচার পাবে।”