♦ আগাম শীতকালীন সবজিতে দামে স্বস্তি ফিরছে
♦ ভোজ্যতেলের অসাধু সিন্ডিকেট তৎপর
কাজী নূর
উত্তাপ ছড়ানো সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরছে। আগাম শীতকালীন সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় কমতে শুরু করেছে দাম। তবে ভরা মৌসুমেও ইলিশ মাছের দাম কমেনি। চড়া দামে ইলিশ কিনতে না পারায় ভোক্তাদের মাঝে অসন্তোষ বাড়ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে ইলিশের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা স্বত্তেও বিক্রি নেই বললেই চলে। এজন্য অতিরিক্ত দামকে দায়ি করছেন বিক্রেতারা। ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধিতে ভোক্তারা বলছেন, শীতকে সামনে রেখে ভোজ্যতেলের অসাধু ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়েছে। এখনই প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ শুরু না হলে ভরা শীতে বরাবরের মতো ভোজ্যতেলর দাম অসহনীয় পর্যায়ে যেতে পারে। শুক্রবার যশোরের হাজী মোহাম্মদ মহসিন রোড (এইচএমএম) বড়বাজার ঘুরে এসব তথ্য মিলেছে।
বড়বাজার কালীবাড়ি রোড ও লোন অফিস পাড়া নিচের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে অধিকাংশ সবজি ৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। তবে সরবরাহ কম হওয়ায় কিছু সবজির দাম ৫ থেকে দশ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা থাকায় সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে আগাম শীতকালীন সবজির। বর্তমান বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি ৭০ টাকা, ফুলকপি ১৫০ টাকা, মূলা ৫০ টাকা, পুঁইশাকের মিচুড়ি ১৫০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, শিম মানভেদে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, জলপাই ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, বিটরুট ১৪০ টাকা, পালং শাক ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পেঁপে ১৫ টাকা, ঝিঙে ৫০, ধুন্দল ৪০ টাকা, কচুর মুখি ৩০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, বেগুন ৯০ টাকা, ঢেরষ ৬০ টাকা, কচুর লতি ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কলা ৫০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, কুশি ৩০ টাকা, কুমড়ো ৪০ টাকা, আমড়া ৪০ টাকা, সবুজ শাক ৩০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ওল ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চাল কুমড়ো ও লাউ আকার ভেদে ৪০ থেকে ৬০ পর্যন্ত পিস বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, আল্লাহর রহমতে তরিতরকারি দাম কমতির দিকে। গত দুই সপ্তাহে সবজির দাম অনেক কমেছে। তবে গ্রীস্মকালীন ু সবজি যেমন পটল, ঢেড়স ইত্যাদির মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে সবজির দাম আরো কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাজার করতে আসা তৈরি পোষাক ব্যবসায়ী ইসমাইল হাসান মেহেদী জানান, সবজির দাম কিছুটা কম মনে হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা দীর্ঘ হোক।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা স্বত্বেও দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে। তবে লক্ষ্য করা গেছে, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও ইলিশ কিনছেন না ক্রেতারা। দাম শুনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অধিকাংশ ক্রেতা।
নতুন উপশহর এফ ব্লকের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত পোস্টাল কর্মকর্তা সৈয়দ আলাউদ্দিন জানান, ৭ অক্টোবর থেকে কিছুদিনের জন্য ইলিশ মাছ বিক্রি বন্ধ থাকবে শুনে বাজারে এসেছি। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম শুনে ফিরে যেতে হচ্ছে। দেশের চাহিদা না মিটিয়ে ইলিশ রফতানির সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, আগে দেশের মানুষের অগ্রাধিকার। অবশিষ্ট থাকলে তারপর সেটা রফতানি করা যেতে পারতো। প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরিত অথচ ইলিশ মাছ আজ আমাদের মতো সাধারণের নাগালের বাইরে।
ইলিশ মাছ বিক্রেতা আব্দুল জলিল জানান, বর্তমানে ১ কেজি সাইজের ইলিশ ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকা, ৪ পিসে ১ কেজি ৮০০ টাকা, ২ পিসে ১ কেজি ১৫০০ টাকা, ৪০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
আব্দুল জলিল আরো জানান, আজ ছুটির দিন হিসেবে কয়েক মণ ইলিশ কিনেছি। কিন্তু আশানুরূপ বিক্রি নেই। দাম শুনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতা। এছাড়া ২ কেজি ৬০০ গ্রাম সাইজের কাতলা মাছ ৪০০ টাকা, ১ কেজি ৯০০ গ্রাম সাইজের রুই ৩০০ টাকা, পাবদা ৩২০ টাকা, টেংরা ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ১০০০ টাকা, বাইন ৭০০ টাকা, কৈ ২২০ টাকা, সিলভার কার্প ১৮০ টাকা, পাঙাশ ২২০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা, শিং ৬০০ টাকা, পুঁটি ২৮০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ১২০০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৬৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তা অসন্তোষ বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহ তেলের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও তা পূর্বের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ২২ টাকা পর্যন্ত বেশি। বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৯০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৮ টাকা লিটার, সরিষার তেল ২৩০ টাকা, পাম ১৭০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আটা ৪৫ টাকা, ময়দা ৬০ টাকা, দেশি মসুড়ির ডাল ১৪৫ টাকা, মোটা মসুরির ডাল ৯৫ টাকা, ছোলার ডাল ১২০ টাকা, সোনা মুগ ডাল ১৪৫ টাকা, এলসি মুগ ডাল ১২০ টাকা, সাদা চিনি ১০৫, লাল চিনি ১২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী শফিকুজ্জামান বলেন, ১৬৮ থেকে বৃদ্ধি পেতে পেতে সয়াবিন তেলের দাম আজ ১৯০ টাকা কেজি। শীতকে সামনে রেখে বিক্রেতাদের এমন অশুভ পায়তারা ভালো লক্ষণ নয়। রাষ্ট্রের উচিত চাল, ডাল, লবণ, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নতুবা দাম বৃদ্ধির কারণে জনগণ বেকায়দায় পড়লে রাষ্ট্র এ দায় এড়াতে পারে না।
মুদি পণ্য ব্যবসায়ী ইফাত স্টোরের মালিক ফারুক হোসেন জানান, ভোজ্যতেলের দাম আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। পাইকাররা তেমন সংকেতই দিয়েছেন। এছাড়া এলাচসহ গরম মসলার দামও উর্দ্ধমুখি।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব রকম চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে বাসমতী ৮৬ টাকা, মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা, আটাশ ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, স্বর্ণা ৫০ থেকে ৫৪ টাকা, কাজললতা ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
হাটখোলা রোড চাউল বাজরের মা লক্ষী ভান্ডারের মালিক কালীপদ পাল বলেন, চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বিভিন্ন কারনে দুই এক টাকা ওঠানামা করতে পারে।
মুরগি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৫০ টাকা, লেয়ার ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাটা ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি। তানবীর ব্রয়লার হাউসের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, মুরগি বাজার গত সপ্তাহের চেয়ে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। উৎপাদন, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম আরো একটু কমতে পারে।
শহরের খালধার রোড বরফকল মোড়ে ডিমের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আনিস এন্টারপ্রাইজে গেলে দেখা যায়, লাল ডিম ৩৮ টাকা, সাদা ডিম ৩৬ টাকা, হাঁসের ডিম ৭২ টাকা, কোয়েলের ডিম ১২ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
আনিস এন্টারপ্রাইজের হিসাব রক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা পাবনা ও স্থানীয় খামারিদের উৎপাদিত ডিম সরবরাহ করি।