বাগআঁচড়া সংবাদদাতা
যশোরের শার্শায় বাগুড়ী-কোটা সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের রডসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি, রাতে বিদ্যালয়ের ছাদে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে অর্থ উপার্জন ও বিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন অনৈতিক কার্যকলাপসহ নানা অভিযোগ উঠেছে দপ্তরি (কাম) নৈশপ্রহরী কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। তদন্তে চারটি অভিযোগের মধ্যে তিনটি প্রমাণিত হলেও অজানা কারণে তার বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে স্বপদে বহাল রাখায় চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে বিদ্যালয়ের শিকক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরি (কাম) নৈশপ্রহরী কামরুজ্জামান যুবলীগ কর্মী হওয়ায় বিদ্যালয়ে রাতে দেহ ব্যবসার সুযোগ দিয়ে অর্থ উপার্জন, জুয়ার বোর্ডসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকতেন। আওয়ামী সরকার পতনের পর কিছুদিন বন্ধ রাখলেও পরে আবারও একই কর্মকাণ্ড চালাতে থাকলে এলাকাবাসী তাকে জুয়ার বোর্ড চলাকালীন ধাওয়া দিলে পালিয়ে যান।
পরে তার অপসারণ চেয়ে ৪৮ জন অভিভাবক ও সচেতন ব্যক্তি স্বাক্ষরিত অভিযোগ দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দপ্তরি (কাম) নৈশপ্রহরী কামরুজ্জামানের বিষয়ে অবহিত করলে তিনি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনকে আহ্বায়ক ও রবি শংকর দেওয়ান এবং হারুনুর রশিদকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান অপরাধ স্বীকার করলেও এলাকার একটি স্বার্থান্বেষী মহলের তদবিরে মাত্র বিশ হাজার টাকা জরিমানা করে তাকে স্বপদে বহাল রাখেন। তবে একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে কামরুজ্জামানের সকল অপরাধ ধামাচাপা দিয়েছে একটি মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, এলাকার কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেছে ওই দপ্তরি (কাম) নৈশপ্রহরী কামরুজ্জামান। তাদের প্ররোচনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহেনা বানু এতসব জঘন্য অপরাধ করার পরেও তাকে চাকরি করার সুযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত কামরুজ্জামান জানান, তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সত্য। তিনি ওই কাজে জড়িত ছিলেন বলে নিজে স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে এলাকাবাসী ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা তাকে ক্ষমা করে দেন।
বাগুড়ী-কোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা খাতুন জানান, কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রায় সকল অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয় এবং তদন্ত কমিটির কাছে তার অপরাধ স্বীকার করে। পরে এলাকাবাসীর অনুরোধে তাকে ক্ষমা করা হয়।
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহেনা বানু জানান, কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আংশিক প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে বলে তদন্ত কিমিটি আমার কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। তবে তার বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত করে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে বিষয়টি জানবেন। তিনি আরো জানান, যদি ওই দপ্তরি (কাম) নৈশপ্রহরীর বিরদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে ক্ষমা করার সুযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত এবং মামলার সুপারিশ করা হবে বলে তিনি জানান।