বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও সাড়ম্বরে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ যশোর জেলা শাখা গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভা করেছে। শনিবার বিকেলে শহরের হরিসভা পূজা মণ্ডপে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার জেলার আটটি উপজেলায় মোট ৭০৮টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে শার্শা উপজেলায় ২৯টি, ঝিকরগাছায় ৫৪টি, চৌগাছায় ২৮টি, যশোর সদরে ১৬৫টি, বাঘারপাড়ায় ৯১টি, মনিরামপুরে ৯৭টি, অভয়নগরে ১২৬টি এবং কেশবপুরে ৯৮টি মন্দিরে পূজার আয়োজন করা হবে।
প্রতিবারের মতো এবারও নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা, স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দীপনা এবং আনন্দময় পরিবেশের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, প্রত্যেক উপজেলায় ও জেলা পর্যায়ে সভা এবং সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে মন্দিরে পালনীয় নীতিমালা নির্ধারণ। মন্দিরকেন্দ্রিক সর্বধর্মের মানুষের সমন্বয়ে সুরক্ষা কমিটি গঠন। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আগমন-নির্গমনের পথ নিশ্চিত করা। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন। স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে পালাক্রমে পাহারা দেওয়ার পরিকল্পনা। বিকল্প আলোর ব্যবস্থা রাখা।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ডিআইজি খুলনা রেঞ্জ এবং এমনকি প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে সভায় মিলিত হয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসন এবং পূজা উদযাপন পরিষদ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে প্রতি মুহূর্তে নজরদারি করছে।
যশোরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য বজায় রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পূজাকে সফল করতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব অনিন্দ্য ইসলাম অমিত পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করে যৌথভাবে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম , বিপ্লবী কমিউনিস্টলীগসহ অন্যান্য দলগুলোও সহযোগিতা ও মতবিনিময়ের আশ্বাস দিয়েছে।
মতবিনিময় সভায় উঠে আসে ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকার ভক্তবৃন্দের দুর্দশার কথা। এই এলাকার মানুষজন আর্থিক সংকটে ভুগছেন এবং অনেকে বাড়ির সদস্যদের নতুন জামা কাপড় কিনে দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, চলতি বছরে ভবদহ এলাকা তথা কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগর এলাকায় ১৭টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, যশোর জেলা শাখা তাদের পাশে সামর্থ্য অনুযায়ী দাঁড়িয়েছে এবং জেলা প্রশাসনের কাছেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার ঘোষ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত বাঙালির অন্যতম প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সাড়ম্বরে ও নিñিদ্র নিরাপত্তায় সম্পন্ন হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদ যশোর জেলা শাখার সভাপতি দীপংকর দাস রতন, সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, সহ-সভাপতি দুলাল সমাদ্দার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রতন আচার্য্য, দপ্তর সম্পাদক অজয় হিংস রায়, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট চিরন্তন মল্লিক, পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক উৎপল কুমার ঘোষ প্রমুখ।
যশোর জেলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিচয় অক্ষুন্ন রেখে সকল দুর্গা মন্দির এবং মণ্ডপ পরিদর্শনের জন্য পূজা উদযাপন পরিষদ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।