বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী যশোরের কৃতি সন্তান তরিকুল ইসলাম। তাঁর মৃত্যুর পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন স্ত্রী অধ্যাপক নার্গিস বেগম। আর ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম বাবার জীবদ্দশায় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর রাজনীতির মাঠে অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হন মা-ছেলে। সেই কঠিন পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন তারা। দলের হাইকমাণ্ড তাদের কাজের মূল্যায়ণ করেছেন। বর্তমানে অধ্যাপক নার্গিস বেগম বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিত খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। মাঠের রাজনীতিতে অনিন্দ্য ইসলাম নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন। পাশাপাশি বর্ষিয়ান নেতা তরিকুল ইসলামের অনুসারীদের ভালবাসায় সিক্ত তার দুই উত্তরসূরী।
আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৩ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বিএনপির ‘একক প্রার্থী’ হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন তিনি ।
শুধু নার্গিস বেগম কিংবা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নয়, খুলনা বিভাগে প্রয়াত বিএনপির এমপি, মন্ত্রী ও নেতার অন্তত ৯জন স্ত্রী, সন্তান মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তারা দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বাবা কিংবা স্বামীর আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। পিতা ও স্বামীর ইমেজের পাশাপাশি মেধা, যোগত্যা, দুরদর্শিতায় দলে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছেন এমন অনেকেই বিএনপির মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন।
জানা যায়, যশোর-৩ (সদর) আসনের একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নী। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ প্রয়াত (গুম খুনের শিকার) নাজমুল ইসলামের সহধর্মিনী।
ঝিনাইদহ-২ (সদর-হরিণাকুণ্ড) আসনে চারবারের সংসদ সদস্য ছিলেন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান। তাঁর আসনে রাজনীতিতে সক্রিয় ছেলে ড্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. ইব্রাহিম রহমান বাবু। তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি। পিতার মৃত্যুর পর ছেলে এই আসনের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন।
ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের একাংশ) আসনে বিএনপির চারবারে সংসদ সদস্য এম শহীদুজ্জামান বেল্টু ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর রাজনীতির মাঠে নেমেছেন সহধর্মিণী মুর্শিদা জামান বেল্টু। তিনি দলীয় নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। আগামি সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।
মাগুরা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীয় সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মেজর জেনারেল (অব.) মজিদ উল হকের কন্যা ও চিকিৎসক ডা. সিমিন এ মজিদ মনজু । তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহাম্মদ বাচ্চু মোল্লা। তিনি ওই আসনের বিএনপির চারবারের এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত আহসানুল হক মোল্লার ছেলে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি প্রয়াত সহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের মেয়ে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সদস্য মিলিমা বিশ্বাস মিলি।
জানতে চাইলে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন বলেন, শহিদুল মাস্টার ছিলেন মহেশপুর কোটচাঁদপুরের গণমানুষের নেতা। বারবার নির্বাচিত জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে মেহেদী হাসান রনি এই আসনে বিএনপির নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছেন। সাধারণ মানুষ তাকে শহিদুল মাস্টারের ছায়া হিসেবেই দেখছেন। ব্যাপক সাড়া মিলছে।
মহেশপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, শহিদুল মাস্টারের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন তার ছেলে মেহেদী হাসান রনি। সাধারণ মানুষ বলছে তারা শহিদুল মাস্টারকে ফিরে পেয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী হলে সহজেই বিজয়ী হবেন তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাহাবুবার রহমান বলেন, আমাদের দেশে উত্তরাধিকার সূত্রে অনেকেই নেতা হতে চান। কিন্তু নেতা হতে হলে শুধু উত্তরাধিকার থাকলে হয় না, প্রয়োজন হয় সামাজিক সম্মান, রাজনৈতিক অবস্থান ও অভিজ্ঞতা। শহিদুজ্জামান বেল্টু সাহেবের স্ত্রী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। ৬ মাস আগেও তিনি রাজনীতির মাঠে ছিলেন না।’
জানতে চাইলে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, প্রয়াত জননেতা তরিকুল ইসলাম ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনিও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। তার সেই আদর্শ ধারণ করে সহধর্মিনী অধ্যাপক নার্গিস বেগম ও ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মেধায় রাজনীতিতে খুবই ভাল করছেন। অনিন্দ্য ইসলাম অমিত খুলনা বিভাগে বিএনপিকে পুনর্গঠনে কাজ করছেন। আমরা বয়সে তার চেয়ে বড় হলেও কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
তিনি আরও বলেন, প্রয়াত নেতার পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ যোগ্যতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।’