বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে যশোর শহরের লালদীঘিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে দেবীদুর্গার বিদায় দিয়েছে সনাতন ধর্মের অনুসারীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে রাত একটা পর্যন্ত একে একে চলে প্রতিমা বিসর্জন। তবে বৈরি আহাওয়া থাকায় প্রতিমা বিসর্জনে কিছুটা বেগ পেতে হয় ভক্তদের। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে লালদীঘিতে ভিড় করেন ভক্ত-অনুরাগীরা। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছে, লালদীঘিতে এবার ৪২ টি প্রতিমার বিসর্জন দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার আট উপজেলায় নদ নদী বাঁওড় ঘের জলাশয়ে ৭০৫টি প্রতিমা বিসর্জন শেষ হয়েছে।
লালদীঘিতে যশোরের বিসর্জনের আয়োজন প্রতিবছর ন্যায় এবারও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে চলে।
সহযোগিতা করেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌরসভা। বিসর্জন স্থলে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভার। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন। বক্তব্য দেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার রওনক জাহান। বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, যশোর সদর আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ভিপি আব্দুল কাদের। আরো অংশগ্রহণ করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য খালিদ সাইফুল্লাহ জুয়েলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ।
এর আগে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেবী দুর্গার বিদায়ের আগে মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন ভক্তরা। দেবীর চরণের সিঁদুর নিয়ে নিজেদের রাঙিয়ে তোলেন বিবাহিত নারীরা। শাস্ত্রমতে, স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে দেয়া সিঁদুর নিজের সিঁথিতে লাগিয়ে আশীর্বাদ নেন। পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে দেন তারা। সিঁদুর খেলা শেষে শেষবারের মতো দেবীর আরাধনা করেন তারা। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসেছেন গজে (হাতি) চড়ে। কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন দোলায় চেপে। গজে চড়ে দেবীর আগমনের অর্থ হলো শুভ। মনে করা হয়ে থাকে, দেবী যদি গজে চড়ে মর্ত্যে আসেন তাহলে তিনি সঙ্গে করে সুখ, সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন।
পৃথিবী হয়ে ওঠে শস্য শ্যামলা। কিন্তু সেই সঙ্গে অতি বর্ষণ বা প্লাবনের আশঙ্কাও দেখা দেয়। আর দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়বেন দোলায় (পালকী) চড়ে। দোলায় চড়ে মর্ত্য ছাড়লে ভক্তের মড়ক বা মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, ‘এবার যশোরে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গা পূজা উদযাপন হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশেও প্রতিমা বিসর্জন শেষ করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জন ও উৎসবে মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিলো। প্রতিমা বির্সজনেও বির্সজন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।’